Header Ads

"গোলি মারো গদ্দারকো" বনাম "বাংলার গর্ব মমতা" না যাত্রাপালা নয়; মহড়া শুরু ২০২১-এর। এগিয়ে কারা?

অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): লক্ষ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন; রাজ্যের যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে ভোট ময়দানে। এই যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ হল তৃণমূল আর বিজেপি। রাজ্যের বিয়াল্লিশ টি আসনের মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়ে টগবগ করে ফুটছে গেরুয়া ব্রিগেড। সমর্থকরা অপেক্ষমান আর তো মাত্র কয়েকমাস!
তারপরেই বাংলার মসনদে বসছে বিজেপি। অনেকে আবার মনে মনে মন্ত্রীসভা গঠন করে ফেলেছেন! গতকাল অমিত শাহ তো মুখ্যমন্ত্রীর ভবিষ্যতবাণী করেই ফেলেছেন। তার পরেই শুরু হয়ছে বাবু যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ!
এখন থেকেই কে কোন আসনে দাঁড়াবেন তার জন্যে লোকাল নেতারা যোগাযোগ এবং তৈল মর্দন করতে শুরু করেছেন নিজের পরিচিত সার্কেলের নেতাদের।
লোকসভার অঙ্কে বিজেপি রাজ্যের ১৪৭ টি আসনে এগিয়ে থাকলেও ম্যাজিক ক্রশ করা যে সহজ হবে না তা বুঝিয়ে দিলেছে সাম্প্রতিক দিল্লির নির্বাচন। দিল্লিতে লোকসভার সব আসনে জয় পেয়ে এবং ৭০ আসনের বিধানসভায় ৬৫ আসনে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮টি আসন পেয়ে দিল্লি বিধানসভায় থেমে গেছে বিজেপি-র বিজয়রথ। বিজেপি-র প্রচারে কখনই প্রাধান্য পায়নি কর্মসংস্থান, স্বনির্ভরতা বা উন্নয়নের ইস্যু। সর্বদাই বিজেপি-র প্রচার কৌশল নির্ভর করে দেশপ্রেমের জিগির, পাকিস্তান, দেশদ্রোহী ইস্যুর। কমবেশি সব বিজেপি নেতাই বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা দেশপ্রেমিক আর বিজেপি বিরোধীরা দেশদ্রোহী!
কিন্তু দিল্লীতে কেজরিওয়ালের প্রচার কৌশল ছিল প্রবল অরাজনৈতিক ভাবে চরম রাজনৈতিক! বিজেপির দেশদ্রোহী বা পাকিস্তান কোন ইস্যুকেই আমল না দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপ এর ভোট প্রচারের হাতিয়ার ছিল উন্নয়ন। তার সেই উন্নয়নের ঝড়েই উড়ে গেছে অন্য সব গা গরম করা ইস্যু। যদিও কেজরি-র উন্নয়ন বা আপ দলের নেতাদের স্বচ্ছতা স্বচ্ছ কাঁচের মত পরিষ্কার হলেও রাজ্যে তৃনমূল এবং তার নেতাদের স্বচ্ছতা ঘষা কাঁচের মতই!
সেক্ষেত্রে কিছুটা অ্যাডভান্টেজ বিজেপি অবশ্যই পাবে কিন্তু বাদ সাধবে ব্র্যান্ড মমতা! কারন ব্র্যান্ড মমতার বিকল্প বিজেপি-র হাতে নেই অন্যদিকে তৃণমূলের হাতে মমতা ছাড়া আর কিছুই নেই!
এই অবস্থায় ভোট প্রচার ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে দুটি দল। গতকাল অমিত শাহ একেবারেই বিজেপি-র আদি অকৃত্তিম পদ্ধতি অনুসরন করে শুরু করেছেন ভোট প্রচার। বেকারত্ব, কর্মসংস্থান বা সার্বিক উন্নয়নের গল্প শিকেয় তুলে ভারত মাতার জয়ধ্বনি, গদ্দার বা পিসি ভাইপো হটাও ইস্যুই সামনে এসেছে। আর পাকিস্থান তো বিজেপি-র কপিরাইট করা ইস্যু! চিটফান্ড দোষীদের ৯০ দিনের মধ্যে জেলে ঢোকাবেন বলার সময় যথারীতি ভুলে গেছেন তৃনমূলে থাকার সময় চিটফাণ্ড কির্তী করা কত ছোট বড় মাঝারি নেতা পদ্মবনে লুকিয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন!
অন্যদিকে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে তৃনমূলও, তৃণমূলের হাতে কিছু না থাকলেও মমতা আছেন! তাই ৯ বছর রাজত্ব চালানোর পরেও সরকারের কোন উন্নয়নের জিকির নেই; সবই মমতা ময়। এরাজ্যে মমতা বন্দপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা ছাড়া একটা বাসস্টপ বা সুলভ শৌচালয় নির্মান করার টাকা বরাদ্দ করতে পারেন না তৃণমূলের মন্ত্রী বা বিধায়করা। সবকিছুই হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরনায়। যাই হোক 'যা কিছু আমার আছে তাই সম্বল' কে পাথেয় করে প্রশান্ত কিশোরের ফর্মূলায় ভোটে নামছে তৃনমুল। রণকৌশলের নাম "বাংলার গর্ব মমতা", কর্মসূচী শুরু হচ্ছে ৭ই মার্চ থেকে! কিন্তু জয় কি সহজ হবে তৃণমূলের? এদিকে প্রশান্ত কিশোর থাকলেও ওদিকে কিন্তু মুকুল রায় আছেন! খেলা জমে যাবে ২০২১ নির্বাচনে।
আমাদের মত যাদের গ্রামে বাড়ি, ছোট বেলা থেকেই যাত্রা দেখে অভ্যস্ত; যাত্রার পোস্টার দেখে অভ্যস্ত। রাজ্যের প্রধান দুটি দলের প্রাথমিক প্রচার কৌশলের শব্দ বন্ধনী সেই যাত্রা পালারই ইঙ্গিত দেয়; "গোলি মারো গদ্দারকো" বনাম "বাংলার গর্ব মমতা"! ভাবা যায় এগুলো যাত্রাপালার নাম নয়; ভোট বা ভাটের প্রচার কৌশল!



‘দিদিকে বলো’-র পর ‘বাংলার গর্ব মমতা’। নেতাজি ইন্ডোরের বহু প্রতীক্ষিত ইভেন্ট ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭ মার্চ থেকেই শুরু হয়ে যাবে কর্মসূচি। শাসকদলের তরফে তিন ধাপে প্রচার চলবে রাজ্যের ২৯৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রে। দলের পুরনো কর্মীদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে দলের কাজে ফের সক্রিয়ভাবে শামিল করা হবে। জনকল্যাণমূলক কাজগুলির সুফল প্রচারের আকারে নিয়ে যেতে হবে একেবারের বুথ স্তরে। ছোট ছোট ভিডিও তৈরির মাধ্যমেও চলবে প্রচার। প্রত্যেকটি এলাকায় জনজাতির ভিত্তিতে আলাদা করে সভা, সম্মেলন চলবে। সবমিলিয়ে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ ইভেন্টের মধ্যে আরও একগুচ্ছ প্রচার কর্মসূচি নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামছে রাজ্যের শাসকদল।

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.