যারা বলেন বই পড়ার অভ্যাস কমেছে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য! ভুল বলেন৷ #SpecialArticle
অরুনাভ সেনঃ বইমেলায় যেতে পারিনি এবারও নিজের উপর ভীষন রাগ হচ্ছিল৷বইমেলা শেষ হওয়ার একটা দুটো দিন আগে মধ্য কলকাতা সারাদিনই ঘুরছিলাম৷এত ভাল লাগছিল কি বলব বেশ অনেকগুলো জায়গায় চোখে পড়ল কেউ বগলদাবা করে সঙ্গে দুহাতে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ঘুরছেন৷ অনেকটা বই কিনেছেন৷বুঝলাম মানুষগুলো সত্যি কলকাতা বইমেলার জন্য সারাবছর চাতক পাখির মত অপেক্ষা করেন৷সমালোচকরা ভ্রু কুঁচকে বলেন যতটা কেনেন অনেকে তার সিকিভাগও নাকি পড়েন না! বিশ্বাস করিনা৷ভীড় বাসে সদ্য কেনা বইগুলোকে সযত্নে রক্ষা করতে তাদের বাড়তি ব্যস্ততা বুঝিয়ে দিচ্ছিল প্রতিমুহুর্তে,বাড়ি গিয়ে নতুন বইয়ের সুঘ্রান না পাওয়া পর্যন্ত এই যত্ন-খাতির চলবেই৷তারপরে নিজের পড়া হবে,একটার পর একটা৷কোনও লেখকের বইয়ে মুগ্ধতার আবেশে এক,দুই তিনবারও অনেকে পড়ে ফেলেন৷মজার বিষয় হয় কষ্ট করে বেষ্টসেলারের বই কিনে পড়ে সেই মুগ্ধতা বন্ধুমহলে বিতরণ করলে কখনও-কখনও একটু ক্ষতি শিকারও করতে হয়!ঘনিষ্ঠ বন্ধুবৃত্তে বই পড়তে দিয়ে সেই বই আর ঘরে ফেরে না!
দিচ্ছি,দেবো,কালই দিয়ে দেবো!অথচ ফেরেনা প্রিয় লেখকের প্রিয় বই৷আমার ধারনা এই অভিজ্ঞতা কম-বেশী আমাদের অনেকের আছে৷যদিও অনেকে বলেন নাকি অন্যান্য অপরাধের তুলনায় বই ফেরত না দেওয়ায় নাকি অপরাধ একটু কম! যাই হোক গৌরচন্দ্রিকা শেষ,যে কথাটা আরও শুনি ইদানীং,সমালোচকরা বলেন শুধু বাঙালি নয় গোটা পৃথিবী জুড়ে বই পড়ার অভ্যাসটা কমেছে,কথাটা আমি খুব একটা বিশ্বাস করিনা৷আমার যেমন যুক্তি আছে,তেমন যারা বলেন তাদের কাছেও হয়ত পাল্টা যুক্তি আছে৷ এর জন্য অনেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলোকে দায়ি করছেন৷বলা ভাল যারা আগে নিয়মিত পড়াশুনা করতেন তারাই নাকি অনেক বেশী সময় কাটান হয় ফেসবুকে অথবা whats app করেই!আসলে সময় বোধহয় বলছে সময়টা আত্মসমীক্ষার অর্থাৎ তথ্যের জন্য কোনটা জরুরী বেশী পড়াশোনা নাকি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলিতে আত্মমগ্ন হয়ে থাকা!তবে একথা সত্য তথ্যের জন্য হয়ত পড়াশোনা প্রয়োজন কিন্তু ফেসবুক না থাকলে সমাজ,মানুষ কি চাইছে,কি নিয়ে আলোচনা করছেন,কোন বিষয়টা চান সেটা বোধহয় সবথেকে বেশী জানা যায়৷তবে ভিন্ন মত আছে অনেকের বক্তব্য একটু চোখ কান খোলা রাখলেই মানুষ বুঝতে পারবেন সমাজে প্রাসঙ্গিক বিষয় কোনটি,মানুষ কি চাইছেন,আর কি বা চাইছেন না৷অস্বীকার করার উপায় নেই বর্তমান সময়টা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের স্বর্ণযুগ বললে বোধহয় অত্যুক্তি হয়না৷নিন্দুকদের অবশ্য অভিযোগ আছে,ফেসবুক খুব কমফোর্ট জোনে পরিণত হয়েছে এখানে সহমতের লোকেরা একে অণ্যের পিঠ চাপড়ে দেন,গঠনমুলক বিতর্ক কম,হলেও বেশীরভাগ সময় সেটি খেউড়েও পরিনত হয়৷এইসবের কারনে অনেকেই নাকি ফেসবুক ছাড়ছেন!অনেকের আরো অভিযোগ ফেসবুককে অনেকে সালিশি সভা বানিয়ে ফেলেছেন৷
সবাই সবটা জানেন,শেখার মাণুষের সংখ্যা কম,বরং অনেকের হাবভাব সবাই সবকিছু জানেন!ফেসবুকের যারা সমালোচনা করেন তাদের বক্তব্যের জোরালো দিক যার যা খুশী করতে পারেন,কোনও এডিটিং নেই৷তবে ইতিবাচক দিক নিশ্চয়ই বেশী,না হলে কেন ভারতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন-দিন বাড়বে? সবথেকে বড় কথা ফেসবুক সেই শক্তিশালী মাধ্যম যেখানে এক লহমায় নিজের বক্তব্য অংসখ্য মানুষের কাছে নিমেষে পৌঁছে দেওয়া যায়,যা মেটষ্ট্রীম মিডিয়াও বোধহয় পারেনা,বা নগন্য ব্যাক্তির সুখ,দুঃখ,আনন্দের অনুভূতি মুহূর্তে অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে ফেসবুক যা মেনস্ট্রীম মিডিয়াতে কল্পনা করতে পারেন না একজন সাধারন মানুষ৷এরপরেও আছে অনেক সামাজিক কর্মকান্ড যার প্রচার করতে পারে একমাত্র ফেসবুকই খুবই দ্রুতলয়ে,সেটা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা হয়ত ফেসবুক ছাড়া সম্ভব নয়৷সবমিলিয়ে এটুকু বলা যায় প্রাপ্তিযোগ নিশ্চয়ই বেশী,না হলে কেন বাড়বে ফেসবুক ইউজারের সংখ্যা,যতই নিন্দুক বলুক ফেসবুক করে সময় নষ্ট করার মন বা মানসিকতা কোনওটাই নেই৷তবে বই পড়ার সাথে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও বিরোধ নেই৷বই এখনও অনেকের প্রিয় বন্ধু৷তারা অবসর সময়টা কাটান বই পড়ে৷সারাবছর ধরে বই কেনেন,আর বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন৷সবমিলিয়ে এটা বোধহয় বলা চলে সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে বই পড়ার অন্তত বিরোধ নেই৷

No comments