Header Ads

অকস্মাৎ ইন্দ্রপতন; অভিনেতা তাপস পাল কে ভুলবেনা বাঙালি! #SpecialArticle

অরুনাভ সেনঃ তাপস পাল আর নেই, এই কথাটা মানতে পারছেন না বাংলার আবালবৃদ্ধ বনিতা৷কতই বা বয়স,মাত্র ষাটের বসন্ত পেরিয়েছিলেন কিছুদিন আগে৷স্বাভাবিক মৃত্যুর বয়স যে এ নয়৷তবু তিনি গেলেন,চলে গেলেন নাম না জানা দেশের উদ্দেশ্যে, অসংখ্য অনুরাগীকে কাঁদিয়ে৷রাজনীতিতে বেশ কিছুদিন অনুপস্থিত ছিলেন,অনেকে আজ বলেন রাজনীতিটা তারজন্য ছিলনা৷কারন পাক্কা রাজনীতিবিদরা কখনও নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বিরোধীদের ঘরে'ছেলে ঢুকিয়ে' দেওয়ার মত অশ্লীল হুমকি দেবার ভুল করবেন না!হয়ত সেইদিন থেকেই পাশের বাড়ির সদা হাস্যময় ছেলেটির ইমেজে লেগেছিল কালি৷প্রতিবাদে বহু স্থানে তাপস পালের কুশপুতুলও দাহ হয়েছে৷গোটা বাংলা জুড়ে উঠেছে ছিঃ,ছিঃ রব,আর ধিক্কার৷সেই ধাক্কা সামলানো গেলেও তারও পরে আরও বড় ধাক্কা তিনি সামলাতে পারেন নি৷বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার৷ভুবনেশ্বর জেলে যখন তিনি বন্দি,তখন যেমন তাঁর পাবলিক ইমেজ হয়েছে কালিমালিপ্ত,তেমনই নিজের হৃদয় আর শরীরটা বোধহয় প্রতিদিন ভাঙছিল আরও তীব্র গতিতে৷
 রাজনীতিবিদদের মত কখন এক স্টেপ এগিয়ে কখন দু পা পিছিয়ে যেতে হয় সেই অঙ্কটা তার অজানাই ছিল৷না হলে সাংসদ হয়ে কেউ অমন কথা বলার মত বড় ভুল করেন৷চোখ-মুখে নিস্পাপ হাসি,অদ্ভুত সরল একটা মুখ সত্যিই যেন বাড়ির পাশের ছেলে,আর সেই ইমেজ দিয়েই তরুন মজুমদারের দাদার কীর্তি ছবিতে অভিনয়ে জিতে নিলেন বাঙালির হৃদয়ে চিরস্থায়ী জায়গা৷জুটি বাঁধলেন আর বাঙালির আর এক পছন্দের অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরীর সঙ্গে৷তাপস-মহুয়া মানে ব্লকবাস্টার৷সব শো হাউজফুল,টিকিটের কালোবাজারীদের মুখে হাসি,দর্শকের উৎকন্ঠা কালোবাজারেও মিলবে কি টিকিট!প্রযোজকদের মুখে চওড়া হাসি,ফিল গুড পরিবেশের আবহ আবার গোটা টলি পাড়া জুড়ে৷সত্যিকথা বলতে কি তাপস মহুয়া অভিনীত "সাহেব,পারাবত প্রিয়া,অনুরাগের ছোঁয়া,আর্শীবাদ ছবিগুলি দেখেন নি সেইসময় হলে গিয়ে দেখেন নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন,বেশ কঠিন৷আটের সেই দশক,উত্তম কুমার নেই,খাঁ-খাঁ করছে টলিউড৷নেই হিট ছবি,নেই উত্তম-সৌমিত্রে বন্ধুত্বপূর্ন দ্বৈরথ, হিট ছবির খোঁজে হন্যে হয়ে গোটা টলিউড,ব্লকবাস্টারের কথা ভুলতে বসেছেন পরিচালক,প্রযোজক থেকে দর্শক,হলমালিকরা৷সেই সঙ্গীন অবস্থা থেকে বাংলা বানিজ্যিক ছবি আবার ব্যবসা শুরু করল তাপস পালের ক্যারিশমায়,পাশের বাড়ির ছেলের ইমেজকে মুলধন করে৷পরে অবশ্য প্রসেনজিৎ-তাপসের দ্বৈরথ বাঙালি উপভোগ করেছে তারিয়ে-তারিয়ে৷অসংখ্য ছবি তাপস পাল করেছেন,নিশ্চিতভাবে সংখ্যাটা দুশোর আশপাশে হবে৷
সেই জনপ্রিয়তাকে ক্যাশ করতে ভুল করেন নি আজকের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷২০০১আলিপুর বিধানসভায় পেলেন টিকিট৷জিতলেন তিনি৷তারপরেও আরও একবার বিধায়ক হয়েছিলেন৷দলে জায়গাটা বেশ শক্ত হল,দলনেত্রীর মন জিতলেন৷এবার আরও বড় মঞ্চ৷কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে টিকিট৷নিরাশ করেন নি দলকে,দলনেত্রীকেও৷জিতেছিলেন তিনি,হয়েছিলেন সাংসদ৷দলের অন্দরে বিতর্কের রেশ যে ভালমত রসায়ন তৈরি করেছে বোধহয় বুঝতে পারছিলেন তাপস পাল৷তবে সব বিতর্ককে হারিয়ে ২০১৪সালেও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তাপস পাল টিকিট পেয়েছিলেন,ফের জিতেছিলেন তিনি৷ একদিকে চলচ্চিত্র, অন্যদিকে রাজনীতি, দুইয়ের ভারসাম্য চমৎকার ভাবে রক্ষা করেও শেষ দিকে তিনি পারলেন না৷অনেকেই বলছেন বিতর্ক কার জীবনে না থাকে!তিনি জেলেও গিয়েছেন,অভিযুক্ত হিসেবে৷তবে দোষী প্রমানিত হননি৷তবে সেইসব বিতর্কের উধ্বে আজ তাপস পাল,পাড়ি দিয়েছেন নাম না জানা দেশের উদ্দেশ্যে৷যাওয়ার আগে জিতে গিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে পাশের বাড়ির সদা হাস্যময় ছেলেটির "দাদার কীর্তি"৷

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.