Header Ads

উন্নয়ন অস্ত্রেই ভেসে গেল 'মেকি' দেশপ্রেমের জিগির! কেজরিওয়ালের উন্নয়ন এখন সারাদেশের মডেল। #SpecialArticle

অরুনাভ সেনঃ হাতেই নেই স্বরাষ্ট্র দফতর অর্থাৎ পুলিশ৷অনেকে বলেন পুলিশ দফতর হাতে থাকলে নাকি অনেক "নয়"কে "ছয়" করা যায়৷সরকারের অনেক দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া যায়৷অনেক সরকার বিরোধী আন্দোলন বিন্দু থেকে সিন্ধুতে রূপান্তরিত হওয়ার আগে পুলিশ দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়৷মিথ্যে কেস দেওয়া যায়,বিরোধী কন্ঠস্বর স্তব্ধ করা যায়৷কিন্তু সেই পুলিশটাই যদি সরকারের হাতে না থাকে তবে ভোটারের হৃদয়টা জিততে ভরসা করতে হবে স্রেফ উন্নয়নে,নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতায়,এবং দুর্নীতিহীন স্বচ্ছ সরকারি ব্যবস্থাপনায়৷ প্রথমবার আপ ক্ষমতায় আসার পর অনেকে ভেবেছিলেন কার্যত একটা নতুন দলকে দিল্লিবাসী ভোট দিয়েছেন কিছুটা এডভেঞ্চারাস মুডে,অনেকটা এমন কংগ্রেস দেখেছি,সারা দেশে বিজেপিকে দেখছি,অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলকে একটিবার ভোট দিয়ে দেখাই যাক তারা কেমনভাবে শাসন করে,কেমন ভাবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করে,কেমনই হয় সরকারি পরিষেবা৷অনেকে বলেন প্রথমবার এন্টি এসট্যাবলিশমেন্ট ভোট বা আরও অনেক ফ্যাক্টরের জন্য কোনও আঞ্চলিক দল ক্ষমতায় আসতেই পারে৷
কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকতে গেলে ঢালাও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী,নিখুঁত সরকারি পরিষেবার বাস্তবায়ন না হলে ভোটারদের মন জয় অসম্ভব,বিশেষত দিল্লির মত জায়গায়,যে সরকারের হাতে পুলিশ দফতরটাই নেই৷এক মাস ধরে সিএএ-এনআরসি নিয়ে উত্তাল গোটা দিল্লি।তাদের ভোট পেতে কেজরীওয়ালের উন্নয়নের মডেলের জবাবে মেরুকরণকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি।কিন্তু সেই হাতিয়ার মুখ থুবড়ে পড়েছে৷গতবারের তুলনায় সামান্য একটু ভাল ফলই বিজেপির বড় নেতাদের আপাতত স্বান্তনা৷অন্তত ট্রেন্ডটাই তেমন৷আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটের ফল ঘোষনার পর ঝাড়ু ঝড়ের এই চিত্রের কিছু বদলাবে না,অরবিন্দ কেজরীওয়ালের তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়াও আটকাবে না৷অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বারবার একটি কথা বলেন,অবশ্য তিনি গেরুয়া শিবিরের চোখের বিষ,তবে তাঁর কথার সারাংশটা খুব পরিস্কার দেশের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষা আর স্বাস্হ্যের সার্বিক উন্নয়ন জরুরী আর ঠিক সেই কাজটা কেজরীওয়াল সরকার করছে মুন্সিয়ানার সঙ্গে,দক্ষতার সঙ্গে,সততার সঙ্গে৷ দিল্লির সরকারি স্কুলে সুইমিং পুল আছে৷
হ্যাঁ আমরা বাংলাতে যা ভাবতেও পারিনা,বিশেষত এমনটা আমরা দেখে অভ্যস্ত আমাদের রাজ্যের বেসরকারি স্কুল গুলিতে,যেখানে বিপুল ফি দিয়ে নিজের সন্তানদের পড়াতে পারেন সমাজের কিছু মানুষ৷কিন্তু একই ম্যাজিক দেখাচ্ছেন কেজরীওয়াল তার সরকারের পরিষেবায়৷ আমুল বদলেছে দিল্লির সরকারি হাসপাতালের পরিষেবাও৷ অর্থাৎ মুখে নয় বাস্তবে হাতে-কলমে উন্নয়নকে পাখির চোখ করে কেজরীওয়াল বিজেপির মেরুকরনের রাজনীতিকে সপাটে ওভার বাউন্ডারি মেরে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীত্বের কূর্সিতে ফিরছেন স্বমহিমায়৷ একটার পর একটা রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হওয়ার পর দিল্লিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন মোদী-শাহরা। সেই পরিশ্রম কিন্তু কাজে আসেনি৷ ৭০টি আসনের মধ্যে অর্ধেকের অনেক বেশি আসন ঝাঁটা দিয়ে বিজেপিকে সাফ করেছেন কেজরীওয়াল। তিনি আবারও মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে চলেছেন।সাধারন মানুষ বলছেন প্রাইভেট স্কুলের ফি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তানদের দামি স্কুল ছাড়িয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করেছেন৷তারা বলছেন কেন এমন করব না? সরকারি স্কুলে ছাত্রদের জন্য এক্সট্রা ক্লাস হচ্ছে এখন। শুধু তাই নয়, প্রাইভেট স্কুলের ফি-ও আপ সরকার কমাতে বাধ্য করেছে। এই সরকার শিক্ষাকে হাতিয়ার করে আরও এগিয়ে চলার নিশান ওড়াচ্ছে সব শ্রেনীর মানুষের হৃদয় জিতে৷বিদ্যুৎ,র মাশুল বৃদ্ধি অনেক সাধারন মানুষের যন্ত্রনা বাড়িয়ে দেয়৷বেশীরভাগ সরকার নিজেদের আয় বাড়াতে গ্রাহকদের ঘারেই কোপটা মারে,লাগাতার বাড়ায় বিদ্যুৎ মাশুল৷কিন্তু আইআইটির প্রাক্তনী হাঁটলেন চেনা ছকের বাইরের পথে৷ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি বিদ্যুৎ মাশুল কমিয়ে দিয়েছিলেন৷ তার পর এবার ভোটের আগে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যবহার নিঃশুল্ক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। শুধু সেখানেই থামেননি তারা বরং আরও বড় সিদ্ধান্ত নেন যে ২০১ থেকে ৪০০ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহারের জন্য ৫০ শতাংশ হারে মাশুল নেবে সরকার। বাকি ৫০ শতাংশ সরকার ভরতুকি হিসাবে দেবে৷কেজরিওয়ালের সিদ্ধান্ত কত বড় মাষ্টারস্ট্রোক আজ প্রমান হচ্ছে৷আসলে বেশিরভাগ মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় অর্থাৎ শিক্ষা,স্বাস্থ্য,বিদ্যুৎ'র মত গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলিতে সরকারি পরিষেবায় মানুষ খুশী হলেই তার ডিভিডেন্ট ভোট বাক্সে মিলবেই৷সেইজন্য দিল্লিবাসী বিজেপির চিরাচরিত মেরুকরণের রাজনীতিতে আস্থা না দেখিয়ে ভরসা পেলেন কেজরীওয়ালের উন্নয়নমুখী সরকারের কাজকর্মে৷সেইজন্য দিল্লির ভোটের ফলের ট্রেন্ড আসার পর থেকেই হাসি চওড়া হচ্ছে আপ নেতা-কর্মী থেকে বিজেপির বিরোধী মানুষদের৷হয়ত বুথ ফেরত সমীক্ষার খবর পাওয়ার পরই দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোডিয়া বলেছিলেন, ‘আমাদের জয় বুঝিয়ে দেবে, আসলে দেশপ্রেম কি জিনিস।
 রাজনীতিতে সুযোগ পেলে মানুষের জন্য কাজ করা যায়। স্কুল কিংবা হাসপাতাল করা যায়।’অর্থাৎ উন্নয়নের কাছে আবার হারল মেরুকরণ৷কেজরীওয়ালের সরকারের কাজে আস্থা দেখিয়ে দিল্লিবাসি প্রমান দিলেন জীবনে বাঁচতে জরুরী শিক্ষা,স্বাস্থ্য সহ অন্যান্য পরিষেবায় যে সরকার ভাল কাজ করবে তাদের জয় কোনও মেরুকরণ দিয়ে রোখা যায় না৷পাশাপাশি আজ বোধহয় বলার দিন কেজরীওয়ালকে দেখে অনেক রাজ্য শিখতে পারে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মত ক্ষেত্রে নাগরিকদের কত সুন্দর সরকারি পরিষেবা দেওয়া যায় যদি সরকারের চোখটাই উন্নয়নমুখী হয়৷
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.