Header Ads

উপনির্বাচনে ফল ভাল হলেই পুরভোট ও ২১'র বিধানসভায় তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী বাম-কং? #PostEdit

অরুনাভ সেনঃ বাতাসে হিমের পরশ৷ কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে বাড়ছে উষ্ণতা৷শীত কিন্তু প্রায় দোড়গোড়ায়৷বোঝাই যাচ্ছে বেশ, শীতকে অর্ভথনা জানাচ্ছে হেমন্ত৷বাতাসে তেমন হিমেল হাওয়া না থাকলেও বেশ একটা শীত,শীত আমেজ আছে,পরিভাষায় এটাই নাকি হেমন্ত৷ কিন্তু সেই হিমেল বাতাসে ক্রমশ তেতে উঠছে বাংলার রাজনীতি৷ফুলকপি,বাঁধাকপি,কড়াইশুটি,বিট,গাজর সিম,পালং শাক বাজারে হাজির৷অর্থাৎ শীতকালীন সবজিরা বলছে শীতের ট্রেন লেটে চলছে,কিন্তু দোরগোড়ায় আরও একটি গনতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব ভোট৷হতে পারে মাত্র তিনটি বিধানসভা ক্ষেত্রের উপনির্বাচন৷
কিন্তু তাতে কি, চড়ছে রাজনীতির পারদ৷বিভাজন আর মেরুকরণ বাংলায় লোকসভা ভোটে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে,অন্তত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন৷ প্রত্যাশিত ভাবে ফল বের হওয়ার পর দেখা গেল লাভের ফসল বিজেপিই ঘরে তুলেছে৷বুথ স্তরে দূর্বল সংগঠন,সত্যি বলতে কি সারা রাজ্যে বলার মত সংগঠন না থাকা সত্বেও,স্রেফ মেরুকরণ আর বিভাজনে লোকসভায় বাংলায় ফ্যাক্টর না হলে তৃণমূলের সন্ত্রাস আর দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্য থেকে বিজেপি সাংসদ সংখ্যা কখনও ১৮তে পৌঁছত না৷যাই হোক ১৮ সাংসদ বাংলা থেকে, বঙ্গ বিজেপির জন্য সবটাই ছিল ফিল গুড৷পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল একেবারেই অনুকুল যেন তাদের পালে ঝড় তোলা দখিনা হাওয়া৷কিন্তু রাজনীতিতে ঘাত-প্রতিঘাত থাকবে,সঠিক ইস্যুকে চিহ্নিত করতে পারা যেমন রাজনৈতিক নেতাদের দক্ষতা,বিচক্ষণতা,তেমনই সংবেদনশীল ইস্যুকে মানুষের কাছে হুমকিতে পরিণত করলে বড় ধস নামতে পারে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কে৷
সব রাজনৈতিক দলকে সবসময় মনে রাখতে হবে,মানুষের কল্যাণসাধনের জন্য রাজনীতি৷কিন্তু কোনও সংবেদনশীল ইস্যু কিছু মানুষের কাছে হুমকিতে পরিণত হলে যার খেসারাত চোকাতে হয় বড় মূল্যে৷হয়ত বিজেপি নেতাদের আগ বাড়িয়ে বাংলায় ক্ষমতায় এলে এনআরসির হুমকির সেই মূল্য চোকাতে হবে তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে,বা তার পরের পুরভোটগুলিতে৷অনেকেই বলছেন লোকসভায় তৃণমূল ও বামেদের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে যারা বিজেপিতে ভোট দিয়েছিলেন সেই ভোটারদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে৷তাদের অনেকেই বিজেপিকে হয়ত আর আপাতত ভোট দেবেন না!বিজেপির থেকে মুখ ফেরানো ভোটটা জোট নাকি তৃণমূলের ঝুলিতে যাবে এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন৷উপনির্বাচনে নতুন ফ্যাক্টর হতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট৷
রাজ্যের তিন কেন্দ্রের বিধানসভার উপনির্বাচন ২৫ নভেম্বর। খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরের উপনির্বাচনকে ঘিরে সাজ সাজ রব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে৷সেমিফাইনাল খেলার ঢঙে নেমে পড়েছে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।বলা যেতে পারে লোকসভার পর এটাই পুরো দস্তুর মহড়া,অন্তত শাসক ও বিরোধীদের দেখে নেওয়ার সংগঠনে খামতি আছে কি,লোকসভার জনপ্রিয়তা আদৌ অটুট আছে কি!অথবা হারানো ভোট ব্যাঙ্ক ফের ঘরে ফিরছে কি!অনেকে বলছেন তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচন আসলে ২০২১'র বিধানসভা নির্বাচনের মহড়া!সেটা হয়ত সঠিক নয়!তবে উপনির্বাচনের প্রচারে যেভাবে রাজনৈতিক পারদ চড়ছে বলা যায় তৃণমূল তিনটি কেন্দ্রে জয়লাভ করে প্রমান করতে চাইবে তাদের জনপ্রিয়তা এতটুকু হ্রাস পায়নি,বিজেপি প্রমান করতে চাইছে লোকসভায় রাজ্য থেকে তাদের বিপুল সাফল্য আসলে ফ্লুক ছিলনা,তেমনই বাম-কংগ্রেস ফের আবার জোট বেঁধে মানুষের কাছে বার্তা দিতে চাইছে,তিনটির মধ্যে একটি আসন জোট জিতলে ২১'র ফাইনালে আসল লড়াই তৃণমূল বনাম জোট৷খড়গপুর করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচনে লোকসভার ফল অনুযায়ি বিজেপি ও তৃণমূল মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস ও বাম জোট কিন্তু ডার্ক হর্স৷এমন কি যদি একটি সিটও যদি তারা জিতে যায় অনেকেই অবাক হবেন না৷সর্বোপরি উপনির্বাচনে জোট প্রার্থীদের ফলাফলের উপর অর্থাৎ তারা তৃণমূল ও বিজেপির কতটা ভোট নিজেদের ঝুলিতে ভরতে পারছে তারই উপর নির্ভর করবে উপনির্বাচনে কারা হাসবেন জয়ের হাসি৷ এই নির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামেরাও কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে৷বিশেষত বিজেপির ঘাড়ে জোরালো নিশ্বাস ফেলছে বাম-কংগ্রেস জোট৷ ২০২০ সালে রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভার নির্বাচন।সেই পৌরসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি যাচাই করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। বিজেপিকে রুখতে যেমন মরিয়া তৃণমূল তেমন মরিয়া বাম-কংগ্রেস জোট৷
যদিও উপনির্বাচন তবুও বিজেপির বিরুদ্ধে চিরাচরিত মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ তুলছে তাদের বিরোধীরা তেমনই বাংলায় চিরাচরিত ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক শক্তির প্রয়োজনীয়তাকে মানুষকে আরও একবার মনে করিয়ে দিতে বাম-কংগ্রেস জোট বার্তা দিচ্ছে রাজ্যবাসীকে৷জোটের নেতারা বলছেন তৃণমূলের বিকল্প ভেবে যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন সেইসব মানুষের মাত্র ৫-৬মাসে দলটির প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে৷বিজেপিকে আক্রমন করে জোট নেতারা বলছেন চিটফান্ড দুর্নীতিতে যেসব প্রভাবশালীরা বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলেন তাদের শাস্তি সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদি-অমিত শাহ জুড়ি৷অথচ মানুষ দেখছেন সিবিআই চলছে পিছনের অদৃশ্য রাজনীতির সুতোর টানে৷ভোট আসলে সারদা-নারদায় সিবিআই সক্রিয় হয়,আবার ভোট মিটলেই সিবিআই শীতঘুমে যায়৷শেষ ৪-৫বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে৷পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির কারনে অর্থনীতির মন্দা গ্রাস করছে মানুষের জীবন-জীবিকায়৷সর্বত্র ত্রাহি,ত্রাহি রব৷নোটবন্দির ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন৷গাড়ি শিল্প থেকে আরও অনেক ক্ষেত্রে বিপুল মন্দা৷সঙ্গে শুরু হয়েছে রেলে বেসরকারিকরণের প্রয়াস৷উঠেছে দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড়৷এয়ার ইন্ডিয়া,ভারত পেট্রোলিয়ামের মত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাকে সরকার বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন সাধারন মানুষ থেকে বাম-কংগ্রেসের নেতারা৷সত্যি কথা বলতে কি অনেকে সোশ্যাল মিডয়ায় কটাক্ষ করে বলছেন বিজেপি সরকার যদি আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকে মানুষ হয়ত কোনদিন সকালে উঠে শুনবে দেশের নামের পাশে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি জ্বল-জ্বল করছে৷অর্থাৎ মোদি সরকারের বেসরকারিকরন ও কর্পোরেট প্রীতিকে এভাবে সমালোচনা করতে আর মানুষ কসুর করছেন না৷আসলে মোদি সরকারের সঙ্গে তাদেরই ভোট দেওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষদের মধুচন্দ্রিমার পর্ব শেষ৷এখন মানুষ দেখছেন রুক্ষ বাস্তব,আর প্রতিদিন সংসার নির্বাহ করা কত কঠিন হচ্ছে৷উদ্বৃত্ত অর্থে একটু ভাল থাকার ইচ্ছাটা প্রতিদিন যেন একটু-একটু করে অকালমৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে৷সঙ্গে বঙ্গে শুরু হয়েছে এনআরসির আতঙ্ক৷এই ইস্যুতে তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস জোট বিজেপিকে তীব্র আক্রমন শানাতে কসুর করছে না৷সবমিলিয়ে বলা যায় লোকসভায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক স্ফীত করা প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের সাইক্লোন দ্রুত দূর্বল হয়ে এখন কেবল বয়ে চলা মৃদু বাতাস৷লোকসভায় খারাপ ফলের পর প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে তৃণমূল যেমন তাদের সাংগঠনকে ফের গুছিয়ে বিজেপিকে তীব্র আক্রমন শানাতে শুরু করেছে,তেমনই বামেরাও বুঝেছে তাদের ছেড়ে যাওয়া ভোটারদের তাদের দিকে ফেরা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা৷
তারই প্রস্তুতি নিতে জোট নেতাদের হাসি আরও চওড়া হচ্ছে৷স্বভাবত তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে৷তারা বুঝেছেন যদি জোট কোনও একটি আসন জিততে পারে,অথবা বিজেপিকে পিছিয়ে দিতে পারে তবে শুধুমাত্র ২০২১'র বিধানসভা নির্বাচন নয়,তারও আগে পৌর নির্বাচন গুলিতে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে আবার তারা রাজ্য-রাজনীতিতে ফিরে আসবেন স্বমহিমায়৷হয়ত তৈরি হবে ২০১৬'র বিধানসভা নির্বাচনের হুবুহু সেই একই চিত্র৷টানটান উত্তেজনা,থ্রিলার,সঙ্গে নতুন অঙ্ক প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার ভোটে ঝুলি ভরাতে পারলেই বাম-কংগ্রেস জোট অনেকের অনেক অঙ্ক গুলিয়ে দেবে৷তবে তার আগে জোটকে ভোটারদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা বামও কংগ্রেস নেতাদের দায়িত্ব৷কার ভোট কোনদিকে শেয়ার হয়,বা হয়না, এসব তর্ক-বিতর্ক,ঝগড়া কোন্দল ভুলে,রাজনৈতিক ছ্যুৎমার্গ ভুলে বাম-কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক শক্তির প্রকৃত শক্তিবৃদ্ধি ঘটাতে পারলে ২১''র বিধানসভা ও তারও আগের পুরভোটগুলিতে আবার ডার্ক হর্স হতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট৷
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.