Header Ads

ডায়েবেটিস সম্পর্কে কিছু জরুরী তথ্য। যা আপনাকে জানতেই হবে...

নজরবন্দি ব্যুরোঃ গত কাল ১৪ই নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১১ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত মানুষের হার দিন দিন বাড়ছে। দেশে মৃত্যুর প্রথম পাঁচটি কারণের একটি হলো ডায়াবেটিস,এটি মানবদেহের প্রাচীনতম রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ঘাতক রোগটি দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে।এবং এই রোগে প্রতি বছর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য মানুষ। দৈহিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ছে অনেকে, পরিবারগুলো হচ্ছে ধ্বংস আর সাথে সাথে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে ব্যাহত। ডায়াবেটিসের কারণে সমাজ হারাচ্ছে কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় তরুণ–যুব গোষ্ঠীকে, ইতিমধ্যেই প্রতিদিন বাড়ছে ডায়াবেটিসের জটিলতা জনিত কারণে অন্ধত্ব, স্নায়ুর রোগ, কিডনি ও হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া, এইভাবেই হাজার হাজার রোগী নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে, পরিবার ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে,আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল অনেক কম। কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত ইত্যাদি সংক্রামক রোগের আক্রমণে মানুষ মারা যেত বেশি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি,চিকিৎসা, নিরাপদ জল ও খাদ্যের সরবরাহ এবং বিভিন্ন রোগের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে অনেক। তাই বয়সজনিত জটিলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি এখন হয়ে উঠেছে বড় ঘাতক।


উন্নয়নশীল দেশগুলিতে খুব দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। মানুষের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, শ্রম ও ব্যায়াম কমে যাচ্ছে, মানসিক চাপ বাড়ছে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। এসব কারণে আনুপাতিক হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, ভারতে শিশুদের মধ্যে আশংকাজনক হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ করে খেলাধূলা কমে যাওয়া, পড়াশুনার চাপ বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ টিভি–কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকার পাশাপাশি ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন,চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বেশি সংখ্যায় এই রোগ সনাক্ত হচ্ছে যা কয়েক দশক আগেও এত সহজ ছিল না। ডায়াবেটিস একটি বিপাকীয় অনিয়মজনিত ব্যাধি। আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় নামক একটি গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন গ্লুকোজকে ভেঙ্গে শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগাতে সাহায্য করে। কোন কারণে শরীরে ইনসুলিনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতি হলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং একসময় অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি। এটা কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। যাদের বংশে, যেমন বাবা–মা বা রক্ত সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়দের এ রোগটি আছে, যাদের ওজন অনেক বেশী, যারা কোন কাজ–কর্ম করেন না, ঘরে বসে বসে অলসভাবে সময় কাটান এবং সারাক্ষণ খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে যাচ্ছেন, তাদের এই রোগটি হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।এ রোগের অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো–অতিরিক্ত খিদে, পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, কোন কারণ ছাড়াই শরীরের ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায় সময় দুর্বলতা বোধ করেন, এবং কাজ কর্মে আগ্রহ হারান, এমনকি অনেক সময়ে রোগীর যৌন ইচ্ছা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া চোখে কম দেখা,শরীরে ঘন ঘন ফোড়া হওয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া, জিহ্বায় ছত্রাকের সংক্রমণজনিত কারণে সাদা সাদা ঘা হওয়া, মেয়েদের যোনীপথে চুলকানী হওয়া, শরীরের কোথাও সামান্য কাটা–ছেঁড়া বা ঘা হওয়ার পর তা শুকাতে দেরী হওয়া, হাত ও পায়ের আঙ্গুল ঝিন ঝিন করা এবং হাত–পা অবশ হয়ে আসা বা গা ভারি ভারি লাগা, চুলকানি হওয়া ইত্যাদি এ রোগের উল্লেখযোগ্য উপসর্গসমূহ। তবে অনেক সময় রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় না এবং রোগী অন্য কোন রোগের কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে এই রোগ ধরা পড়তে দেখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। অঙ্গ–প্রত্যঙ্গে রক্ত প্রবাহে বিঘ্নের সৃষ্টি হয় এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহে অসঙ্গতি দেখা দেয়। এ রোগ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে চোখ, কিডনী, পায়ুতন্ত্র, ত্বক, হৃদযন্ত্র ইত্যাদিসহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ–প্রত্যঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার প্রদাহ বা ইনফেকশন সাধারণ জনগোষ্ঠীর চেয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে বেশী দেখা যায়। যেমন ফুসফুসে যক্ষা, কিডনী ও মূত্রনালীতে ইনফেকশন, ত্বকে ফোঁড়া জাতীয় সমস্যা ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশী দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগটি নির্মূল করা সম্ভব নয়।
 এ রোগ সারাজীবনের। তবে যথাযথ চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে রোগটি খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে রোগী প্রায় স্বাভাবিক কর্মে জীবন যাপন করতে পারেন,সুশৃংখল জীবন যাপনই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। সময়মতো এবং পরিমাণ মতো খাদ্যগ্রহণই মূলত এ রোগের প্রধান চিকিৎসা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে না চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কখনো সম্ভবপর নয়। তাছাড়াও প্রাত্যহিক জীবনে আরো কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। যেমনঃ– নিয়মিত হাঁটুন। প্রতিদিন শুধু নিয়মিত হেঁটেই ডায়াবেটিস অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যাদের সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই তারা বিকালে, সন্ধ্যায় কিংবা রাতে হাঁটুন। নিয়ম করে জোরে হাঁটা আবার একটা ভালো ব্যায়ামও বটে। তাই হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। যারা গাড়ি ছাড়া এক পাও চলেন না তারা কিন্তু নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা পরিশ্রম আপনাকে করতেই হবে। দূরে গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথটুকু হেঁটে যান।দোতলা কিংবা তিনতলায় উঠতে লিফ্টে চড়বেন না, সিঁড়ি দিয়ে উঠুন আর নামার সময় কখনই লিফ্ট নয়। সাথেসাথে ধূমপান বন্ধ করুন। শরীরের ওজন ঠিক রাখুন। শরীরের আরেক বড় শত্রু হলো অতিরিক্ত ওজন এবং অলসতা। শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং বিভিন্ন ধরণের জটিলতাসমূহ দেখা দেয়। তাই প্রতিদিন হাঁটাচলার সাথে সাথে কিছুক্ষণ হালকা ব্যায়াম করুন এবং নিজের কাজ নিজে করুন। উচ্চতার সাথে মিল রেখে বয়স হিসেবে ওজন ঠিক রাখুন। সবসময় অতিরিক্ত আহার পরিহার সবসময় অতিরিক্ত আহার পরিহার করুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে মধ্যে এ রোগকে পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদের মানুষের জন্য প্রধানতম স্বাস্থ্য সমস্যা হিসিবে চিহ্নিত করেছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে ২৮৫ মিলিয়ন মানুষ নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত এবং এর শতকরা ৭০ ভাগই দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। তাই এখুনি এ রোগ সম্পর্কে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে সামান্য পরিবর্তন, একটু খাদ্য শৃঙ্খলা, তালিকায় একটু পরিবর্তন এসব ছোটখাটো বিনা খরচের কিছু অভ্যেস রপ্ত করতে পারলে ডায়াবেটিসের মতো মরণব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.