Header Ads

বাজারে দাম ৮০ অথচ কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮ টাকায়! লাভের গুড় খাচ্ছে কে? #SpecialArticle

মৌনি মণ্ডল, নজরবন্দিঃ  কিছু থাকুক বা না থাকুক, নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, সকলের রান্নাঘরেই একটি বিশেষ জায়গা দখল করে থাকে 'পেঁয়াজ'। বলাই বাহুল্য, পেঁয়াজের দাম গগনচুম্বী হওয়ায় এই কারনেই কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সাধারণ মানুষদের। এক কিলো পেঁয়াজের মূল্য ৮০ টাকা! আপেলের থেকেও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে চোখ জল আসছে ক্রেতাদের।

কলকাতায় ৮০, দিল্লীতে ৯৯ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। শুধু আপেল নয়, পেঁয়াজের দাম পেট্রোল এবং ডিজেলের তুলনায়ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। সরকারের এহেন উদাসীনতার জন্য কাকে দায়ী করা উচিত আমাদের?
সাধারন মানুষের দুর্ভোগ তো রয়েছেই, কিন্তু সাধারণ ক্রেতাদের থেকেও পেঁয়াজের দাম নিয়ে কৃষকরা যে সমস্যাগুলি সহ্য করছে তা বহুগুণে উদ্বেগজনক। সম্প্রতি একটি ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের এক কৃষক তাঁর চাষ করা পেঁয়াজের জন্য অত্যন্ত হাস্যকর এবং সন্তোষজনক দাম পেয়ে কাঁদছেন। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আহমদনগরের বাসিন্দা ওই কৃষককে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছিল কেজি প্রতি ৮ টাকায়। ভিডিওটিতে ওই বিধ্বস্ত কৃষককে বলতে শোনা যায়, "বৃষ্টিতে মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলতে আমায় শ্রমিকদের নিয়োগ করতে হয়েছিল, কীভাবে আমি সেইসব খরচ পরিশোধ করব?"

তবে, তিনিই একমাত্র নন। হাজার হাজার কৃষক দিন-রাত পরিশ্রম করে, ফসল উত্পাদন করে দেশের জনসংখ্যাকে ব্যাপক পরিমাণে খাবারের যোগান দিচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে উপেক্ষিত হয়ে আসছে তারা। কিছু কিছু ফসলের জন্য তাদেরকে যে মূল্য দেওয়া হয়, খুচরো বাজারে বিগত কয়েক বছরে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছে সেইসব ফসলের দাম।

যদিও এই বৈষম্যের নেপথ্যে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। কৃষকদের সর্বাধিক উদ্বেগের কারণ হিসেবে বলা যায়, রাজ্য এবং কৃষি মন্ত্রকের অব্যাহত উদাসীনতা। গ্রাহকরা পেঁয়াজ কিনছেন ৮০ টাকা কেজি দরে এবং কৃষকরা প্রতি কেজি পেঁয়াজের পরিবর্তে পাচ্ছেন মাত্র 8 টাকা, মাঝের বাকী ৭২ টাকা কোথায় যায়?

বিষয়টি ভয়ঙ্কর শোনাতে পারে, কিন্তু প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন, এই মাঝের অঙ্কটি চলে যায় সংগ্রহকারী বা মধ্যস্থতাকারীদের হাতে, যারা সাধারণ মানুষের ও কৃষকদের রক্ত ​​চুষছে।

যদিও এটা কোনও নতুন গল্প নয়। কয়েক বছর আগে, ২০১৩ সালে, গান্ধী জয়ন্তীতে হাজার হাজার কৃষক তাদের দাবি জানিয়ে রাজধানীতে একটি ঐতিহাসিক পদযাত্রা করেছিল।

ভারত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মেরুদন্ড গঠনে সক্ষম, তা জেনেও তাদের প্রতি তেমন মনোযোগ দেয় না কেন রাষ্ট্র? যদি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা যায়, তাহলে কৃষকদের উত্সাহিত করার বদলে তাদেরকে বারবার হতাশার অন্ধকারে ফেলে দেওয়া কেন? সমস্যার ইতিবাচক সমাধান না করার পরিবর্তে সরকার পেঁয়াজ আমদানির পরিকল্পনা করছে, যা ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী কৃষকদের দুর্দশাকে আরও বড় ধাক্কা দেবে।

সুতরাং, পরের বার যখন এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে বাজারে যাবেন, মনে রাখবেন, আপনার কেনা দামের ৯০ শতাংশই মধ্যস্থতাকারীদের কাছে চলে যাবে। আসলে সবসময় যা ঘটে এসেছে, প্রতিদিন যা ঘটে চলেছে, তা হ'ল জনগণের অধিকারের একটি বিদ্রূপ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে গত কয়েক বছরে দেশে কমপক্ষে ১১,৩৭৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। নীতি নির্ধারকরা যদি আরও কৃষক-মৃত্যু দেখার অপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে তাঁরা নিশ্চিন্ত হতে পারেন, কারণ এভাবে চলতে থাকলে তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.