Header Ads

প্রসঙ্গ BSNL এবং সরকারী অপদার্থতা।

নজরবন্দি : দেশজুড়ে BSNL বন্ধ হওয়া না হওয়ার দোলাচলের মধ্য 16ই জুলাই, 2019 এ প্রকাশিত RSS এর মুখপাত্র 'অর্গানাইজার' একটি প্রবন্ধে দেশভক্তরা BSNL ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্র নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে : 1) BSNL ও MTNL অবশ্যই বেসরকারীকরণ করতে হবে। এদের অফিস ও জমি বিক্রির বিপুল অর্থ কাজ হারানো শ্রমিক কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণে ব্যবহার করা যেতে পারে। ( " BSNL & MTNL must be privatised, and that their buildings and sites might be sold, which would fetch colossal amounts which could be used to compensate the employees for their loss of jobs.") 2) বেসরকারী লগ্নী ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের টেলিযোগাযোগ পরিকাঠামো তৈরি করা কঠিন। ( "developing world class telecommunications infrastructure is difficult to conceive without private sector capital.") 3) এয়ার ইন্ডিয়া, BSNL ও MTNL এর মতো লোকসানে চলা, শেয়ার পড়ে যাওয়া সংস্থাগুলো টিকিয়ে রেখার দরকার কি? ( "why we should keep afloat the consistently loss making, market-share losing Air India, BSNL & MTNL?") 4) সমস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানের চেনা বৈশিষ্ট্য হল উদ্যোগহীনতা, ঔদাসীন্য এবং নিস্ফলা নির্বুদ্ধিতা।
( "laziness, indifference and barren dullness are the well-known marks of the public sector.") 1851 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি টেলিগ্রাফ পরিষেবার সূত্রপাত ঘটানোর পর থেকে 1985 সাল পর্যন্ত পোস্টাল ও টেলিগ্রাফ ভারত সরকারের অধীনে একটিই সংস্থা ছিল। 1985 তে তৈরী হলো DoT ( Department of Telecom), তখন টেলিপরিষেবা দেবার একমাত্র সংস্থা ও সম্পূর্ণ সরকারী সংস্থা। 1986 সালে বিদেশে যোগাযোগের জন্য VSNL ও বোম্বাই, দিল্লির নাগরিক পরিষেবার জন্য MTNL - দুটি সরকারী সংস্থা তৈরী হলো। 1991 সালে নয়া উদারবাদী অর্থনীতি চালু হওয়ার পর দেশী বিদেশী কর্পোরেটদের উঁকিঝুকি শুরু হলো টেলিযোগাযোগ সেক্টরে। DoT যখন প্রচুর বিনিয়োগ করে ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দুর্গম জনপদে ল্যাণ্ডলাইন পরিষেবা বিস্তারের দায়বদ্ধতা নেভাতে ব্যস্ত, নরসিমা রাও সরকার 1995 সালেই কম বিনিয়োগে অধিক মুনাফার মোবাইল পরিষেবাক্ষেত্রটি তুলে দিল কর্পোরেটদের হাতে । DoT কে লাইসেন্স নিতে দেওয়া হলো না। 2000 সালের 1লা অক্টোবর DoT হলো BSNL। বারবার আবেদন করেও মোবাইল পরিষেবা চালু করার লাইসেন্স পেল না BSNL। লাইসেন্স পেল অবশেষে 2002 সালে। শুরুতেই 2003 সালে সবকটি বেসরকারি সংস্থা মিলে যত মোবাইল কানেকশন বিক্রি করল একাই BSNL করল তার চেয়ে বেশী। ঐ বছর BSNL এর লাভ হলো 5976 কোটি টাকা, পরের বছর 10183 কোটি টাকা। 2009 অবধি প্রতি বছর লাভ করা সংস্থাটি দেশের মধ্যে দশম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠল। এই BSNL কে আজ এতো কথা বলতে হচ্ছে কেন? প্রথম থেকেই মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তারের ক্ষেত্রে সরকার BSNL কে বাধা দিয়েছে, আর সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে। 2007 সালে 4.5 কোটি ল্যাণ্ডলাইন যন্ত্রাদির টেন্ডার বাতিল করেছিল টেলিকম মন্ত্রী ( 2G স্পেকট্রাম খ্যাত) এ. রাজা শুধুমাত্র বেসরকারী সংস্থার মোবাইল বিক্রি বাড়ানোর জন্য। 2010 সালেও একই ঘটনা। এবারে আপত্তি হলো চীনা কোম্পানিতে। দেশের সুরক্ষার প্রশ্ন ! অথচ দেশী বিদেশী বেসরকারী সংস্থা কোন প্রযুক্তি ব্যাবহার করবে তা নিয়ে কোন বিধিনিষেধ? না, নেই। ল্যাণ্ডলাইন অলাভজনক । প্রতিবছর কতো নতুন ল্যাণ্ডলাইন দিতে হবে তার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিত সরকার। প্রতিরক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলা এসবে ল্যাণ্ডলাইন খুব প্রয়োজনীয় ছিল। এরজন্য BSNL এর যা ক্ষতি হবে সরকারের তা বহন করার কথা ছিল, সরকারেরই কথায় এই পরিষেবা হলো : "socially necessary, but commercially unviable” । কিন্তু এ যাবৎ BSNL কোন সরকারী অনুদান পায়নি। 2013-14 সালে BSNL এর মোট লোকসান 7,600 কোটি টাকা, এরমধ্যে গ্রামীণ ল্যাণ্ডলাইনে লোকসান 10,000 টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ ল্যাণ্ডলাইন এর বোঝা না থাকলে নেট লাভ হতো 2,400 কোটি টাকা।
 টেলিকমিউনিকেশনের জগতে মুকেশ আম্বানীর Jio পা রেখেছে 2007 সালে। তিন বছরে তেমন কিছু ছাপ ফেলতে না পারলেও ছবিটা বদলে যায় 4G স্পেকট্রাম নিলামের পর। ইনফোটেল ডিজিকম ( IDPL) নামের মাত্র 2.51 কোটি টাকা স্থায়ী সম্পদের মালিক একটি ভুঁইফোড় কোম্পানিকে 252.2 কোটি টাকা গ্যারান্টি দিল, আর তার জোরে সবাইকে হারিয়ে 12,257 কোটি টাকা দর হেঁকে বানিয়ে নিল 4G স্পেকট্রাম ! আর কাগজে কলমে সেই কোম্পানিটিই 4800 কোটি টাকায় কিনে মুকেশ আম্বানী অন্য সব প্রতিযোগীকে হটিয়ে একচেটিয়াকরণের উদ্যোগ নিলেন। এতে তার সবচেয়ে বড় সহায়ক দেশের সরকার, আর সবচেয়ে বড় বাধা সরকারি সংস্থা BSNL। তাই বারেবারে আবেদন করা সত্ত্বেও BSNL কে 4G ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। Jio যেটা করছে তাকে বলে "প্রেডাটরি প্রাইসিং", অর্থাৎ পণ্যের এমন মূল্য নির্ধারণ করা যাতে অন্যরা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়। আশ্চর্যজনকডভাবে এতে সরকারের বিপুল রাজস্ব ঘাটতি হলেও নীরব মদত দিচ্ছে। এয়ারসেল, টাটা টেলিসার্ভিস, রিলায়েন্স ইনফোকম ও টেলিনুর ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হলো। ভোডাফোন, এয়ারটেলের মতো আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ধারাবাহিক লোকসানে চলছে। একমাত্র Jio দেখাচ্ছে তারা লাভ করছে। যদিও আমেরিকার বিখ্যাত অডিট সংস্থা 'বার্নস্টেইন' এর মতে Jio লোকসানে চলা কোম্পানি যার মালিক ইচ্ছাকৃত হিসেবের গরমিলে একে লাভজনক দেখাচ্ছে ( Business Standard, 27 th July, 2018 ) । কোম্পানিগুলো এই লোকসান সামলাচ্ছে ঋণ করে। ভোডাফোনের ঋণ 1,18,000 কোটি, এয়ারটেলের 1,08,000 কোটি, এমনকি Jio র 1,12,100 কোটি টাকা। সেই তুলনায় BSNL এর ঋণ মাত্র 13,000 কোটি টাকা। মনে রাখা দরকার BSNL একমাত্র টেলিকম কোম্পানি যার গ্রাহক সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েছে, কমে নি। গতমাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর '19 এও BSNL এ যুক্ত হয়েছে 13.5 লক্ষ নতুন গ্রাহক। ( Jio ছাড়া সব বেসরকারি কোম্পানির গ্রাহক কমেছে )। BSN এর কাছে ৭.৫ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার জিও সহ সবকটি বেসরকারী কোম্পানির একত্রিত করে যার কাছাকাছি।আর আছে কর্মকুশলতাই আন্তর্জাতিক মানের ১লক্ষ ৮০হাজার লড়াকু শ্রমিক কর্মচারী।মনে আছে

মটোরোলা,নোকিয়া,এরিকসন,সিমেন্সের মতো বিদেশী প্রাইভেট কমপানিগুলোর কথা।মোবাইল বাজারে যাদের একচেটিয়া রাজ ছিল।এখন ওরা হেরে ভূত।বাজারে রাজ করছে দুটি চীনা কোম্পানি।হুয়াউ জেডটি।না এগুলো প্রাইভেট কোম্পানি না এগুলো চীন সরকারের।সুতরাং বেসরকারি লগ্নি ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের টেলিযোগাযোগ পরিকাঠামো তৈরি করা যায় না তা নয়।এর উদাহরন ও আছে।

 সংগৃহিত:লিখেছেন সমিক মন্ডল

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.