তৃণমূল বিরোধী অধীরেই আস্থা রাহুল-সোনিয়ার,রাজ্যে ফের পাশাপাশি আসবে বাম-কং?
নজরবন্দি ব্যুরোঃ অধীর চৌধুরীকে সন্মান জ্ঞাপনের কাজটি একেবারে প্রথম পর্বে সেরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক লড়াই যাই থাকুক,যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী কে প্রাপ্য সন্মান দিতে তিনি এতটুকু কার্পন্য করতে নারাজ৷আসলে খবরের শিরোনামে থাকুন আর না থাকুন অধীর চৌধুরী বাংলার সেই বিরল নেতাদের মধ্যে পড়েন যারা প্রবল জনপ্রিয়,অসম্ভব ভাল জনসংযোগ,দলের বুথ স্তরের কর্মীদের চেনেন,নীচুতলার কর্মীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে,তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যারা রাস্তায় নেমে শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পিছপা হন না৷কোনও সন্দেহ নেই সম্ভবত রাজ্য রাজনীতিতে যেহেতু অধীর চৌধুরী কখনও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর নরম করেন নি,বা বরাবর তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন,প্রতিবাদের স্বর জোরালো করেছেন হয়ত সেই কারনেই কংগ্রেস সমর্থকদের গন্ডির বাইরেও তার প্রবল জনপ্রিয়তা বাম ও বিজেপি সমর্থকদের হৃদয়েও৷স্বভাবত সেই মানুষটি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হওয়ায় উচ্ছসিত বাংলার অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক সচেতন মানুষ৷ কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা হয়েছেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী,
সনিয়ার এই সিদ্ধান্তেই নিশ্চিতভাবে অনেকেই খুশী হয়েছেন৷লোকসভায় বিরোধী নেতার মর্যাদা নেতার মর্যাদা পেল কংগ্রেস,এবং লোকসভায় মোদীদের সঙ্গে টক্কর নিতে কংগ্রেস কে ভরসা করতে হল বাংলার রাজনীতির রবিনহুড অধীর চৌধুরীর চওড়া কাঁধের উপর৷ কংগ্রেস সমর্থক থেকে অনেক বাম সমর্থক এই খুশীর আবহে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলছেন৷তাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট যদি অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক লড়াই ও তার নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা সম্পর্কে সনিয়া-রাহুলের এতই আস্থা ছিল,তবে কেন তাকে প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল?অধীরের নেতৃত্বে ২০১৬সালে গড়ে উঠেছিল বাম-কংগ্রেস জোট৷তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট কিন্তু অনেক মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল৷তৃণমূল বিরোধী মানুষেরা অর্থাৎ কংগ্রেস ও বাম সমর্থকরা কিন্তু আপ্রান লড়াইয়ে তৃণমূলকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন৷হয়ত জোট ক্ষমতায় আসেনি,কিন্তু সেদিনই রাজ্য রাজনীতিতে প্রমান হয়েছিল বাম-কংগ্রেস এক হয়ে লড়াই করলে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়া যায়৷সর্বোপরি ২০১৪সালে লোকসভায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট শতাংশ এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায় জোটের জাদুতে৷এরপরে যেমন রাজ্য রাজনীতিতে জোট ভেঙে কংগ্রেসে,বামেরা আলাদা লড়াই করলেও তাদের ফলাফল কখনও মানুষকে বিশ্বাস যোগাতে পারেনি আলাদা-আলাদা লড়াই করে বাম-কংগ্রেস কখনও তৃণমূলকে টক্কর দিতে পারবে৷অর্থাৎ একটি বিষয় পরিস্কার হয়েছিল জোটের রসায়নই পারে বাংলায় তৃণমূলক টক্কর দিতে৷
কিন্তু অধীর চৌধুরী সভাপতি পদ ছাড়ার পর লোকসভায় বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েও কিছু কংগ্রেস নেতা-নেত্রীর একগুঁয়েমিতে ভেস্তে গেল জোট৷বামেরা রাজ্যে একটি আসনও পেলনা,উল্টোদিকে অধীর চৌধুরী নিজের ক্যারিশমা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় জিতলেন বহরমপুরে৷আবার মালদা দক্ষিনে বামেরা কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করায় সেখানেও জিতেছে কংগ্রেস প্রার্থী৷সবমিলিয়ে এই কথাটা হয়ত বলা যায় অধীর চৌধুরী যদি প্রদেশের সভাপতি পদে থাকতেন তাহলে হয়ত বাংলায় বাম-কংগ্রেসের জোট হত,হয়ত বামেরা যেমন কয়েকটি আসন পেতেন,তেমনই কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়ত৷অর্থাৎ জোট না হওয়ার জন্যই তৃণমূল বিরোধী ভোটটা একেবারে সুইং হয়ে বিজেপির পক্ষেই গিয়েছে৷অধীর চৌধুরী যেমন এক দিকে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধীতায় আক্রমণাত্মক,তেমনই আদ্যন্ত তৃণমূল-বিরোধী৷তেমনই এক নেতাকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণেও নতুন মাত্রা যোগ করলেন সনিয়া-রাহুল৷অনেকেই বলছেন কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তিন বছর আগে বাংলায় বিধানসভা ভোটে বামেদের সঙ্গে সমঝোতার পথে গিয়েছিলেন অধীরবাবু। এ বার বাড়তি গুরুত্বপ্রাপ্ত অধীরবাবুকে সামনে রেখে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের ভূমিকা কেমন হয় সেইদিকে সবার নজর থাকবে৷তবে রাজ্যে লোকসভায় ২২টি সিট পাওয়ায় কিছুটা ব্যাকফুটে তৃণমূল৷নতুন শক্তি হিসেবে বিপুল উত্থান বিজেপির৷তাদের কে রুখতে আগামীদিনে তৃণমূল কতটা সফল হবে সেই বিষয়ে কিন্তু ইতিমধ্যেই অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷যে ভাবে তৃণমূলের থেকে বিভিন্ন পুরসভা ছিনিয়ে নেওয়া থেকে জনপ্রতিনিধি ভাঙাচ্ছে বিজেপি,বা তৃণমূলের নেতারা যেভাবে দলে-দলে বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন,তাতে একটি বিষয় সবাই সংশয় প্রকাশ করছেন আদৌ কি তৃণমূলের আর ক্ষমতা আছে রাজ্যে বিজেপির এই উত্থানকে থামাতে পারার?
কোন মন্তব্য নেই