Header Ads

বাম নেতৃত্ব ভার আসুক মানুষের নেতাদের হাতে৷#PostEdit

অরুনাভ সেনঃ রাজ্য শোচনীয় পরাজয়,প্রাপ্ত ভোট শতাংশে ভয়ঙ্কর ধস, তারপরও হারিয়ে যাওয়া ভোট ব্যাঙ্ক উদ্ধার করতে প্রচলিত পথের বাইরে হাঁটার কোনও রাস্তা এখনও বাতলে দিতে পারল না রাজ্য সিপিএম কিংবা সর্বভারতীয় বাম দলগুলি৷বাংলায় সিপিএমের রক্তক্ষরনের মোটামুটি শুরু ২০০৯এর লোকসভা নির্বাচনের পর পরই৷ তারও আগে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদগুলির সিংহভাগ বামেরা দখল করলেও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের সিটগুলিতে বিরোধীরা প্রায় অর্ধেক আসন জিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল বামেদের থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ৷কিন্তু একটি করে নির্বাচন,রক্তরক্ষন আরও বেড়ে যাওয়া,কর্মী সমর্থকদের হতাশা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি,নেতৃত্বের সেই গতানুগতিক উত্তর, হারের পর্যালোচনা করতে হবে,আত্মসমালোচনার রাস্তা চালু রাখতে হবে,মানুষের সাথে জনসংযোগ আরও দৃড় করতে হবে৷
মোটামুটি এক ছকে বাঁধা উত্তর রাজ্যের বাম কর্মী, সমর্থকদের পুঁথি পড়ার মত মুখস্ত হয়ে গিয়েছে৷যদিও বাস্তবে সদর্থক পদক্ষপ আদৌ কি তারা নিয়েছেন নেতৃত্ব বলতে পারবেন না,বলতে পারবেন না বাম কর্মী সমর্থক থেকে যারা এখনও পর্যন্ত রাস্তায় থেকে বাম রাজনীতিটা করেন৷২০১১-এর পরিবর্তনের পরেও অনেক বাম সমর্থক নিশ্চিত ছিলেন,এবার মানুষ দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে৷ জরুরী অবস্থা থেকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের বিরোধী কন্ঠ স্তব্ধ করার রাজনীতির বিরুদ্ধে তৎকালীন বাম নেতৃত্বের মানুষকে নিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইকে আজও কূর্ণিশ করেন বাম সমর্থক থেকে বামেদের জীবনে ভোট দেননি এমন গনতন্ত্রপ্রিয় মানুষেরা৷১১-এর পরিবর্তনের পর বাম সমর্থকরাও আশা করেছিলেন এবার বোধহয় বামেদের আন্দোলনে বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত হবে!ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষ বুঝবেন রাজনৈতিক আন্দোলন করে কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় দেখাবন নেতারা৷তৃণমূল সরকারের বিরোধীতার অনেক ইস্যু বামপন্থীরা পেয়েছিলেন৷বিশেষত শাসক দলের সঙ্গে চিটফান্ড কান্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বামেরা পারতেন সারা রাজ্য ব্যাপী আন্দোলন করে জীবনের সর্বস্ব হারানো মানুষদের আস্থা অর্জন করতে৷কিন্তু কোথায় তেমন আন্দোলন দেখলেন মানুষ!বরং কিছুটা সুজন চক্রবর্তীর নিজের উদ্যোগে,এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য,মহম্মদ সেলিম ছাড়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে চিটফান্ড নিয়ে আন্দোলনে কোনও নেতা কথা বললেন কোথায়?আসলে ক্ষমতা হারানোর পরেই বামেদের আন্দোলনহীনতা বারবার চোখে পড়েছে৷ এই অপ্রিয় সত্যিকথা আজ শুনতেই হবে বাম নেতৃত্বকে৷অথচ বামপন্থী রাজনীতিকে ভালবেসে অসংখ্য তরুন-তরুনী চেয়েছিলেন স্রেফ মানুষের জন্য কাজ করতে৷অসম্ভব ভাল রেজাল্ট,স্বচ্ছ ভাবমূর্তি,পার্টি অন্ত প্রান সেই মানুষগুলি কখনও পার্টির বিশেষ নেতৃত্বের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য দেখান নি,বরং তারা অনুগত ছিলেন কেবল পার্টির প্রতি,আদর্শের প্রতি৷তারা দলে যোগ্য পদ পাননি৷বরং তাদের নিয়ম করে কোনঠাসা করেছেন ক্ষমতোলোভী অনেক বাম নেতা৷
এদের বেশিরভাগই আজ অভিমানে পার্টিতে নেই,বরং তারা নিষ্ক্রিয়,তারা উন্নয়নেও ভিড়ে যাননি,বিকাশের ট্রেনেও উঠে পড়েন নি৷এই মানুষগুলিকে আজ বড্ড প্রয়োজন৷এরা জীবন দিয়ে,আদর্শ দিয়ে,অন্তর দিয়ে বাম রাজনীতিটা করতেন৷যোগ্যতা ছিল,পার্টিতে প্রমোশম হওয়া উচিৎ ছিল,কিন্তু কোনও বিশেষ নেতা-নেত্রীর কাছের মানুষ না হয়েও এরা ছিলেন আক্ষরিক অর্থে সাধারন মানুষের প্রতিনিধি৷সত্যিকারের বাম রাজনীতিতে যারা সম্পদ হতে পারতেন তাদের কতজন আজ সক্রিয় পার্টিকর্মী,কতজনের হাতে নেতৃত্বভার আছে আজ কিন্তু প্রশ্ন তোলার দিন৷আজ প্রশ্ন তোলার দিন তাদের দিকে যারা পার্টি কর্মীদের উপর চলা পুলিশি জুলুমে নির্লিপ্ত হয়ে চা খেতে পারেন৷প্রশ্ন ওঠা উচিৎ তাদের নেতৃত্ব নিয়ে৷তবে হ্যাঁ এসব কথা নিয়ে লেখা হলে কিছু বিশুদ্ধবাদী এক্ষুনি বলবেন লেখক পক্ষপাতদোষে দুষ্ট৷বাজারি পত্রিকার মত লেখা৷আসলে ১১সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে রাজ্যের বাম নেতারা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ভয় পেয়েছেন৷কেন প্রান্তিক মানুষেরা তাদের ছেড়ে যাচ্ছেন সেই বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন করে রোগের দাওয়াই ঠিক করতে পারেন নি৷তৃণমূলের হাতে গ্রাম-গঞ্জে আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান নি৷তুলনামূলক ভাবে বিজেপির প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে চলেছেন,ভাবখানা এমন আমরা তো এঁটে উঠতে পারছি না!বিজেপিই পারবে তৃণমূলকে জব্দ করতে৷হ্যাঁ বিজেপি হয়ত তৃণমূলকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে লোকসভায়৷একদা লাল দূর্গ বাংলায় লোকসভায় ১৮টি সিট জিতে তারা চমকে দিয়েছে৷তবে এই ফলে যারা আনন্দ পাচ্ছেন তাদের ভাবতে হবে বিজেপির সব থেকে বড় রাজনৈতিক শত্রু বামেরা৷
বামেদের নির্মুল করতে আগামীদিনে বিজেপি যদি বাংলায় তাদের আগ্রাসনের রাজনীতির আরও গতি বাড়ায় অনেকেই অবাক হবেন না৷আজ বাংলার বাম দলগুলি একটিও সাংসদ লোকসভায় পাঠাতে পারল না,বেশিরভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে৷এই ফলাফলের দায় বামেদের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিতে হবে৷প্রয়োজনে নতুন মুখ আনা হোক নেতৃত্বে৷যারা জনপ্রিয়,যাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা আছে,যারা সহ কমরেডের পুলিশের মার খাওয়া দেখেও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পাশে দাঁড়িয়ে থেকে চা খেতে পারেন,তাদের মানুষ দেখলেন,এরা পার্টিকে এক ইঞ্ছি এগিয়ে দিতে পারেন নি,বরং এদের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাজ্যে ইঞ্চি,ইঞ্চি করে রাজনৈতিক জমি হারাচ্ছে সিপিএম সহ বাম দলগুলি৷তবে কেন নেতৃত্বে তাদের নিয়ে আসা হবে না,যাদের গ্রহনযোগ্যতা আছে একেবারে জনমানসে,যারা পার্টির নেতা নন,জনগনের নেতা,তাদের জন্য এবার জায়গা ছাড়ুক সিপিএমের পার্টির নেতারা৷

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.