Header Ads

“কমরেড, নবযুগ আনবে না ?” পড়ুন...ভাবুন, 'ভাবা প্র্যাকটিস করুন।'


বাঙাল বিপ্লবী: আজ থেকে ৮ বছর আগে, ২০১১ সালের মে মাসে আমি প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। বুক বাজিয়ে এসএফআই করি। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তেও আমরা ইউনিয়ন জিতেছিলাম, এবং ভেবেছিলাম যে হাজার বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও লড়াই করে আমরা ৮ম বামফ্রন্ট তৈরি করব। বলাই বাহুল্য আমরা পারি নি। তার অনেক বিশ্লেষণ আছে, যার মধ্যে যাওয়া অর্বাচীন। কিন্তু আজ ২০১৯ এর বাস্তবে দাঁড়িয়ে কটা কথা না বলে পারছি না।
২০০৮-০৯ সাল থেকেই বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে শুরু হয় স্বেত সন্ত্রাস। প্রশাসন বিকলাঙ্গ, অস্ত্রধারী লুম্পেনদের দাপট। প্রশাসনিক মাথা মুখ্যমন্ত্রী সহ সমগ্র প্রশাসন তখন ভেঙ্গে পড়েছে। গ্রামে গ্রামে কমরেডদের ঘর ছাড়া হওয়ার পালা শুরু তখন থেকে। কিছু পার্টিজান মানুষ তখনও প্রতিরোধ করেছেন। এমত সময়ে প্রশাসন সব জেনে বুঝেও লড়াই করা কমরেডদেরই ধিক্কার জানিয়েছেন সেই সময় থেকেই আভাস পাচ্ছিলাম যে চট্টগ্রামে, তেভাগায়, তেলেঙ্গানায় লড়াই করা; ৭২ থেকে ৭৭ এর আধা ফ্যাসিস্ট আক্রমণ প্রতিহত করা পার্টি আর আজকের পার্টি এক নয়।
তারপর ২০১১ সালে পরিবর্তন এল। ব্যপক সন্ত্রাসের কবলে পড়লেন বামপন্থী কর্মীরা। এলাকা ছেড়ে পালালেন, কিন্তু ঝাণ্ডা ছাড়লেন না। আমরা যেন কেমন আস্তে আস্তে নেতিয়ে গেলামকেবল ভোটের নিরিখে নয়, লড়াই করার ব্যপক রসদ থাকা সত্ত্বেও সেভাবে জোরদার লড়াই করতে পারলাম না। তবুও বেশ কিছু এলাকায় সন্ত্রাস কে চোখে চোখ রেখে লড়ে গেলেন কিছু মানুষ। আহত হলেন, প্রত্যাঘাত ও করলেন। কিন্তু তাদের ওপর নেমে আসা পুলিস ও তৃণমূলের যৌথ আক্রমণ থেকে পার্টি তাদের পর্যাপ্ত সাহায্য করতে পারলো নাবেশিরভাগ নেতাই খোঁজ রাখলেন না সেই সব কর্মীদের। বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্বেও এরা স্থান পেলেন না। পার্টি নেতৃত্বের একটা বড় অংশ গতানুগতিক ভাবেই চলার প্রকল্প নিলেন। চাটুকার তাঁবেদারদের আপোষকামীরা তখতে বসে পার্টির দিশা ঠিক করল। যার ফলে তৈরি হল একটা বড় পলিটিকাল  vacuumমানুষ ব্যপক হারে ক্ষুব্ধ হতে শুরু করল তৃণমূলের ওপর কিন্তু সেই vacuum fill up
করার জায়গায় আস্তে আস্তে উঠে এল বিজেপি। রাষ্ট্র ও কর্পোরেট মিডিয়ার ক্ষমতায় ব্যপক বৃদ্ধি পেল তারা। আরএসএস ধীরে ধীরে তাদের শাখা বাড়ালো। ধর্মীয় উত্তেজনার মাদকের সাথে লাঠিখেলা, ব্যায়াম সহ ফিসিকাল ট্রেনিং দিয়ে যুবকদের মন জেতা শুরু করল।সমাজ বাটোয়ারা হয়ে গেল হিন্দু মুসলমানে। তৃণমূল মুসলিমদের মসিহা সাজল, বিজেপি হিন্দুর ত্রাতা। যে কোন ভাবে বিজেপি প্রতিষ্ঠিত করল যে একমাত্র বিকল্প তারাই। তার প্রতিফলনও পাওয়া গেল পঞ্চায়েত ভোটে। অনেক এলাকায় বিজেপি এগিয়ে এল, এবং তার সিংহভাগই আমাদের শক্ত এলাকায়। এটা রূঢ় বাস্তব। এই লোকসভা ভোটের প্রাক্কালেও হাওয়া এরকমই। এখনও মনে হচ্ছে আমরা যেন দিশাহীন এক জলযান।
এই লোকসভা ভোটে আমরা ব্যপক কোন ফল করব, এই আশা আমি রাখি না। ব্যপক ফল কেন করতে পারব না তা নিয়েও বিশেষ ক্ষোভ নেই কারণ পরিস্থিতি অনুকূল নয়। তাও যে কোন প্রকারে আমাদের সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তৃণমূল ও বিজেপি যে একে অপরের পরিপূরক তা মানুষ কে, বিশেষ করে আমাদের সমর্থক দরদীদের বোঝাতে হবে। ওদের দেওয়া agenda নয়, আমাদের agenda ঠিক করতে হবে। ওরা গরুর মাংসের কথা তুললে আমাদের সজোরে বলতে হবে, যে গরু খাওয়ার খাবে যে খাওয়ার নয় খাবে না- আমরা দেখব সকলে খেতে পেল কিনা। যেভাবে বিজেপি ও তৃণমূল মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে, আমরা বুঝেও সেটা মানুষ কে বোঝাতে পারছি না। ভোটমুখী রাজনীতি তে আমরা জোট জটে ফেসে যাচ্ছি এবং propaganda যুদ্ধে পিছিয়ে যাচ্ছি স্রেফ নতুন চিন্তা ও প্রযুক্তি না ব্যবহার করে। এই তথ্যপ্রযুক্তির বাজারে, হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক থাকা সত্ত্বেও আমরা পেরে উঠছি না কেবল অনিহার কারনে। Battle of perception একবার হেরে গেলে জেতা মুশকিল। তাই আমাদের এই দুমাস লেগে পড়তে হবে। সব বুথে সকল ভোটার এর ফোন নম্বর জোগাড় করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া সহ mass sms, paid advertisement করতে হবে। ওরা আমাদের দেওয়াল না দিলেও আমাদের মানুষের ঘরে ঘরে পৌছাতে হবে। সে যেভাবেই হোক। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এগোতে হবে অল্প সময়ে। আরএসএস এর দুই মুখ তৃণমূল ও বিজেপি কে রুখে দিতে হবে। নয়তো একদা কল্লোলিনী বোম্বাই শহরের তীব্র শ্রমিক আন্দোলন বা তেলেঙ্গানায় লাল ঝাণ্ডার যেমন পতন হয়েছে, আমাদের ও তাই হবে। পূর্ব বাংলার রিফিউজি পরিবারের ছেলে হয়ে সিদুরে মেঘ আমায় ভয় পাওয়ায়। গোবলয়ে কিছুদিন চাকরি করে বুঝেছি, একবার এই নীতি মানুষের মনে বাসা বেঁধে ফেললে তা কি ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে। গোবলয় হতে দেওয়া যাবে না যে কোন উপায়ে। আমরা মেনে নিতে পারব না যদি বাংলাতেও সমাজ বামুন কায়েত হিন্দু মুসলমান উঁচু নিচুতে ভাগ হয়ে যায়।
তথাপি এখনো সময় অনেক আছে। যুব সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমি কিছু স্বল্প ও দীর্ঘকালিন পরিকল্পনা আপনাদের জানাতে চাই। এর মধ্যে সবথেকে বড় হল ছাত্র যুবদের নিয়ে ক্যাম্প করা। কেবল একটি দুটি ক্লাস নয়, রীতিমত দিন ৭-১০ এর ক্যাম্প যেখানে আদর্শের সাথে সাথে শরীরচর্চাও করানো হবে। সেই ক্যাম্প গুলি থেকে ফিরে গিয়ে ছাত্র যুবদের দায়িত্ব হবে এলাকায় এলাকায় আত্মরক্ষার ট্রেনিং ক্যাম্প বানানো, উদাহারন স্বরুপ উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরে এরম ট্রেনিং ক্যাম্প হয়েছে যার ফল পাওয়া গেছে হাতে নাতে বন্ধ এর দিন গুলি। ব্যপক ছাত্র যুব জমায়েতের সামনে টিকতে পারে নি তৃণমূল। এ ছাড়া বেশ কিছু লড়াকু পদক্ষেপ নিতে হবে কেন্দ্রীয় ভাবে। নবান্ন অভিযানের মত লড়াকু বিক্ষোভ করতে হবে একবার না একাধিক বার। সেই লড়াই এ সামনে থাকা ছেলে মেয়েদের নেতৃত্বের আসন দিতে হবে এলাকা গুলিতে। পার্টির একটা রণং দেহি ভাবমূর্তি তৈরি করতে হবে। গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নেতৃত্ব কে পড়ে থাকতে হবে গণআন্দোলন গুলিতে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাতে আমরা হারানো জমি অনেকটাই ফেরত পাবো। পার্টি ও গণসংঠন গুলির নেতৃত্ব চয়নের সময় কেবল তাদের বাগ্মিতা বা বাইরের পালিশ দেখে নয়, একদম পার্টিজান নীতি মেনে তাদের লড়াই এর খতিয়ান চাইতে হবে। বেশি মধ্যবিত্ত নয়, অসংগঠিত শ্রমিক, ক্ষেতমজুরদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কমিটি নয় মানুষের নেতা চয়ন করতে হবে।
আপনারা হয়ত বলবেন পুলিশ কেস করবে জেলে পাঠাবে ইত্যাদি। কম্যুনিস্টদের বরাবর তাই করেছে পুলিশ। গত দুইদিন আগে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দার্জিলিং জেলার এসএফআই এর সভাপতি সাগর শর্মা কে জেলে পাঠাল পুলিশ। আমরা যদি না মেরেই জেল খাটি, তার থেকে অনেক ভাল মেরে জেল খাটব। আমার নামেও একাধিক মিথ্যা মামলা হয়েছে, পরিবার কে টেনে হেনস্থা করা হয়েছে। তাও আজও আমার ও আমার পরিবারের মাথায় পিস্তল ঠেকালেও আমরা ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলব, আমৃত্যু বলে যাব। তাই অনেকক্ষেত্রে আপনাদের ভয় আমাদের ওপর প্রোজেক্ট করবেন না। অনেক মানুষ লড়তে রাজি আছে, তাদের হাতে লড়ার রসদ তুলে দিন।
কমরেড আমরা নতুন সমাজ গড়ার কারিগর, শ্রেণিহীন সমাজ আমাদের লক্ষ্য। অনেক বড় সে লড়াই, আপনার আমার সবার থেকে বড়। আমাদের ভুল অনেক হলেও আজও আমরা লাল ঝাণ্ডা তুলি, আজও সোশাল ডেমক্রাসির মুখে লাথি মেরে সোচ্চারে বলি আমরা কম্যুনিস্ট, আমরা লাল টুকটুকে দিন আনবো। আমাদের নিজেদের ঘাঁটি মজবুত করতে হবে, করতেই হবে। যুব সমাজের স্বার্থে, যারা বেকার বসে আছে,সব পরীক্ষা পাস করে চাকরি পাচ্ছে না, একের পর এক দুর্নীতি তাদের যৌবন শেষ করে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে বাংলার একটা গোটা জেনারেশন আজ পথে বসে আছে । ২৭ দিন অনশন করছে, আত্মহত্যা করছে, গুমরে মরছে। কাজ নেই, রোজগার নেই কেবল আছে ক্লাবে ক্লাবে মদ মাংস মোচ্ছব। এই লড়াই যুবদের বাঁচার লড়াই। নিজের ঘরের ছেলেমেয়েদের দিকে তাকান। তাদের ক্ষোভ বিক্ষোভ কে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। মানুষ বসে আছে, একটাই প্রশ্ন করছে বারবার, কমরেড, নবযুগ আনবে না ?”

Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.