Header Ads

ঐশী ঘোষদের মত নতুন মুখদের সামনে রেখে পুরভোটে লড়লেই আবার ঘুরে দাঁড়াবে বামেরা

নজরবন্দি ব্যুরোঃ মোটামুটি যদি ঠিক ঠিক হিসেব করে বলতে হয়,তবে বলতে হবে বামপন্থীদের পরাজয়ের শুরু ২০০৮,র পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই৷পঞ্চায়েতের নীচের স্তরের ভোটের বেশীরভাগটা জিতে নিয়েছিল তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল-কংগ্রেস জোট৷প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা,সঙ্গে সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম ফ্যাক্টরকে বামেরা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল৷কৃষি জমি কেড়ে শিল্প,বিরোধীদের এই প্রচারের কোনও বিশ্বাসযোগ্য পাল্টা প্রচার বামপন্থীরা করতেই পারেনি৷বরং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জঙ্গি আন্দোলনকে বিঁধতে গিয়ে দেখা গেল হিতে হয়েছে বিপরীত৷মানুষ আরও ঝুঁকলেন পরিবর্তনের দিকে৷একদিকে প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধীতা,সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রীমোর বাম বিরোধী লড়াইয়ে মুগ্ধ রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষ৷অবশেষে পালাবদল,অবশেষে ৩৪বছরের বাম শাসনের অবসান৷মুখ্যমন্ত্রীর কূর্সিতে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এরপরেও ২০১৩সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সার্বিকভাবে বামপন্থীদের রেজাল্ট কিন্তু তেমন খারাপ ছিল না৷উত্তর ২৪ পরগনা,নদীয়া জেলায় বামেদের ফলাফল ছিল যতেষ্ট ভাল৷সমর্থকরা উদ্দীপনার জোয়ারে ভাসছেন,হিসেব চলছে কে প্রধান হবেন,কে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হবেন৷কিন্তু বাংলার রাজনীতিতে দেখা মিলল এক নতুন ধারা৷তৃণমূল দেখালো অনৈতিক রাজনীতির এক অন্য ধারা৷প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বোর্ড গঠন করতে ঠিক যতজন সদস্যের প্রয়োজন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের দিব্যি দলে নিল৷অবাক করা বিষয় এতদিন পর্যন্ত বাংলার মানুষ বিশ্বাস করতেন বামপন্থীরা আদর্শের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারে,সেই বাংলার মানুষরা দেখলেন ক্ষমতা,পদের জন্য বাম জনপ্রতিনিধিরা দিব্যি ভিড়ছেন তৃণমূলে৷নিয়ম করেই চলছিল এই ধারা৷দলত্যাগী বাম জনপ্রতিনিধিদের মুখে শুধু একটাই বাক্য,বিরোধী থেকে উন্নয়নের কাজ করতে পারা যাচ্ছে না,উন্নয়ন করতে চাই৷মানুষের কাজ করতে চাই,সেইজন্য তিনি দলত্যাগ করেছেন৷অবশ্য অন্য দলের ভোটে জিতে দিব্যি দলবদল করা সেই বাম জনপ্রতিনিধিরা কখনও দুঃখপ্রকাশ করেছেন কেউ বোধহয় শোনেন নি,অথবা কেউ বোধহয় বলেনও নি ক্ষমতার জন্য নয় আদর্শের জন্য আমি দলত্যাগ করেছি৷অর্থাৎ একটা জিনিস জলের মত পরিস্কার হয়েছিল যতই আদর্শের কথা বলুন,যতই তখনকার লোকাল বা জোনাল কমিটির দুঁদে নেতারা বড় বামপন্থী বলে নিজেদের জাহির করলেও,আদপে তাদের বেশীরভাগ ছিলেন ক্ষমতালোভী,আদর্শ বিচ্যুত কিছু রাজনৈতিক নেতা৷অনেকে বাংলার রাজনীতির নৈতিকতা-অনৈতিকতা নিয়ে তৃণমূল সুপ্রীমোর সমালোচনা করেন,কেউ বলেন তৃণমূল ক্ষমতায় থাকার জন্য রাজনীতিতে নৈতিকতা বলে একটা বস্তু আছে সেটাই মানুষকে ভুলিয়ে দিয়েছে৷আমি তৃণমূলের এসব বিষয়ে তেমন দোষ দেখিনা৷একটা আঞ্চলিক দল,একজন নেত্রীর ক্যারিশমায় দল চলে৷তারা জানেন ক্ষমতা না থাকলে এই দলটি টিকিয়ে রাখা কত কঠিন৷দলটির সংগঠন যতটা শক্তিশালী মনে হয়,ক্ষমতা না থাকলে সেই সংগঠন তাসের ঘরের মত ভাঙবে বিচক্ষন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা মুখে স্বীকার না করলেও সম্ভবত ঘনিষ্ঠ মহলে সেই কথা অস্বীকার করেন না!অতএব স্থানীয় স্তরে সরকারি ক্ষমতা নিজেদের দখলে রাখতে যখন যে টোটকার প্রয়োজন সেই টোটকা তারা ব্যবহার করেছে৷সে যতই নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠুক৷ এখন যদি সিপিএম নেতৃত্বকে কোনও সমর্থক প্রশ্ন করেন, আপনাদের কি এমন বিচক্ষনতা,যাদের পার্টি সদস্য করলেন,নির্বাচনে দলের টিকিট দিলেন,ভোটে জেতালেন৷তারপরেও কেন তাদের অনেকের আপনারা ধরে রাখতে পারেন না?যদি প্রশ্ন ওঠে কোথাও আপনারা আসলে তাদের পার্টি মেম্বারশিপ দেন বা দিয়েছেন,আপনারা আসলে তাদের দলীয় টিকিটে মনোনয়ন দেন যারা আসলে আপনাদের স্তাবকতা করে এতদূর পৌঁছেছিল!
সেইজন্য সেই মানুষগুলোর স্থানীয় এলাকায় জনপ্রিয়তার পরিমাপ না করে,তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট বিশ্লেষন না করে শুধুমাত্র স্তাবকতায় মুগ্ধ হয়ে সব দিয়েছেন৷তাদের অনেকে দল ছেড়েছে৷কেউ তৃণমূলে,কেউ বিজেপিতে৷ মনে রাখতে হবে,৩৪ বছর বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল না,কিন্তু তখন কংগ্রেস-তৃণমূলের মিছিল-মিটিংয়ে বিপুল মানুষের সমাবেশ হত এমন নয়,কিন্তু ৪০এর বেশী ভোট শতাংশ বরাবর তারা ধরে রাখতে পেরেছিলেন৷অর্থাৎ যারা বাস্তবিক বাম বিরোধী তারা জন্মগতভাবে বাম বিরোধী ছিলেন,বামেরা তাদের মন জয় করতে পারেনি,তাদের ভোটও টানতে পারেনি৷তবে এসব পুরনো কাসুন্দি আর ঘেঁটে লাভ কী? শুধু এটুকু বলা যায়,বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পার্টি মেম্বারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বা ভোটের ময়দানে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে বাম নেতাদের সিদ্ধান্তগুলো একেবারেই সঠিক ছিল না!হ্যাঁ নির্বাচন হয়,পাল্লা দিয়ে ভোট কমে বামেদের, ভরাডুবির পর কর্মী-সমর্থকরা দাবি করেন নতুন মুখের।শোনা যাচ্ছে স্ট্যাটেজি বদল করছে রাজ্য সিপিএম৷
পুরভোটের আগে নতুন মুখের উপরেই ভরসা রাখছে রাজ্য সিপিএম।বর্ধমানের সংস্কৃতি মঞ্চে দলীয় কর্মী প্রয়াত প্রদীপ তা ও কমল গায়েনের স্মরণসভায় এসে ইঙ্গিতটা কিন্তু তেমনই দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য সুর্যকান্ত মিশ্র।সূর্যবাবুর ইঙ্গিতে নিশ্চিতভাবে খুশী হবেন কর্মী,সমর্থক থেকে বামেদের প্রতি একটু দূর্বল মানুষেরা৷বহু বিচক্ষন মানুষকে অহরহ বলতে শোনা যায় কি হবে ঐ বৃদ্ধ পক্ককেশের মানুষদের দিয়ে!হ্যাঁ তারা হয়ত ঐ মানুষদের পার্টির প্রতি নিষ্ঠা না জেনে এমন মন্তব্য করেন৷কিন্তু এটাও ঠিক রাজনীতিতে ঠিক সময়ে সঠিক লোকদের তুলে আনা একটা ঘরানা,কখনও সেটি মাস্টারস্ট্রোকে পরিণত হয়৷বড় উদাহরন নরেন্দ্র মোদি৷আর শুধু রাজনীতি কেন,আপনি যদি খেলার ক্ষেত্রে দেখেন সেখানে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক টূর্নামেন্ট থেকে সম্ভাবনাময়দের বাছাই করে আনা হয় যেন ভবিষ্যত উত্তরসুরীর ক্ষেত্রে যেন খরা না দেখা দেয়৷অথচ দেখুন বাম নেতারা কখনও সেই চেষ্টা করেন নি,হয়ত ভেবেছিলেন ৩৪কেন আরও অনেক বছর তাদের রাজ চলবে৷সুখাদ্য যতই হোক,একই ডিশ যদি প্রতিদিন আপনার খাওয়ার টেবিলে পরিবেশন করা হয়, একটু কিন্তু মনে হবেই চেঞ্জের প্রয়োজন৷
সিপিএমের নেতাদের ক্ষেত্রে সম্ভবত একই ধারনা পোষন করেন মানুষ৷কেন তরুন প্রজন্মের হাতে নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দেওয়া হবে না?তাদের যদি যোগ্যতা থাকে,নিষ্ঠা থাকে,জনপ্রিয়তা থাকে নিশ্চিতভাবে মানুষ তাদের সমর্থন করবে৷আশার আলো দেখা যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে সিপিএম সম্পাদক বলেছেন ‘নতুন মুখে অবশ্যই আমরা ভরসা রাখছি। আপনারা কেউ আগে চিনতেন ঐশী ঘোষ কে? আমি তো অন্তত চিনতাম না। জেএনইউ আন্দোলনের এই মুখ আমাদের রাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান জেলার মানুষ। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি সর্বত্রই এ ভাবে নতুন মুখ উঠে আসছে। অসংখ্য নতুন ছেলেমেয়ে এগিয়ে আসছেন বামপন্থায় বিশ্বাস রেখে। পুর নির্বাচনেও আমরা তাঁদের উপরেও ভরসা রাখছি বৈকি।’ হ্যাঁ একদম সঠিক বলেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র,বামেদের ঘুরে দাঁড়াতে গেলে ঐশী ঘোষের মত নতুন মুখদের উপর ভরসা করতেই হবে৷বাম কর্মী-সমর্থকরা মনে প্রানে চান তাদের নেতৃত্ব দিক ঐশী ঘোষেরা৷প্রবীনরা তাদের দিক নির্দেশিকাটা সঠিক পথে চালিত করুন৷অন্ধকার পেরিয়ে বাংলায় আবারওগে লাল ঝান্ডার উত্থান হবে৷ তবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝেতা না জোট,এসব শব্দের ধাঁধা না রেখে স্পষ্ট বলুক জোট করেই পুরভোট লড়বে বাম-কংগ্রেস৷সেক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে ইতিবাচক বার্তা যাবে৷লাভবান হবে জোটপ্রার্থীরা৷বিজেপির প্রতি সারা ভারতের মত বাংলায় মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে৷সেই সুযোগটা নিতে নতুনদের মুখ করে পুরভোটে ঝাঁপিয়ে পড়ুক বামেরা৷অন্তত বার্তাটা দিক ভোটের ময়দানে বড় শক্তি হিসেবে জোট আছে স্বমহিমায়৷

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.