Header Ads

সরকারি কর্মী-শিক্ষকদের ১৫ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে রাজ্য সরকার!! কিভাবে? #Exclusive

মলয় মুখোপাধ্যায়ঃ আপনারা সকলেই জানেন ১৬|০২|১৭ স্যাট প্রথমে রায় দিয়েছিল "ডিএ রাজ্য সরকারের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে"।আমরা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করি। মহামান্য ভারপ্রাপ্ত প্রধাণ বিচারপতি মাননীয়া নীশিতা মাত্রে এবং মাননীয় বিচারপতি তপোব্রতের ডিভিশন বেঞ্চ সরকারকে তিন সপ্তাহ তথা ২৮|০৮|১৭ মধ্যে ডিএ না দেওয়ার কারণ হলফনামা দিয়ে তা জানাতে বলেন। সরকার ওই দিন যে হলফনামা দাখিল করেন, তাতে বলা ছিল বর্তমানে ডিএ কোনও বাকি নেই এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের কারণেই সরকার নিদিষ্ট সময়ে ডিএ দিতে পারে না। আমরা তখনি বুঝে গিয়েছিলাম, রাজ্য সরকার নিদিষ্ট সময়ে ডিএ না দেওয়ার ঢাল হিসাবে রাজ্যের দেনা এবং ভাড়ার শূণ্যকেই হাতিয়ার করতে চলেছে। আমরা তখন, রাজ্যের বাজেট নোটিফিকেশ নিয়ে চর্চা শুরু করতে লাগলাম।
লক্ষ্য করলাম বাম সরকার ২০০৪-০৫ সাল থেকে ২০১১-১২ পর্যন্ত বাজেটে বেতন-পেনশন খাতে মোট বরাদ্দ করেছিলেন . 1,53,702.20 কোটি টাকা।আর ওই সাল পর্যন্ত খরচ হয়েছিল 1,61,432.10 কোটি টাকা। অর্থাত সরকারের কোষাগার থেকে 8,659.14 কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছিল। অপরদিকে বর্তমান সরকার ২০১২-১৩ থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত নিদিষ্ট নিয়মে ডিএ দেওয়া থেকে কর্মীনিয়োগ না হওয়ার কারনে কর্মীদের বরাদ্দ টাকার 15,129.17 কোটি টাকা সরকার স্রেফ্ মেরে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত লক্ষ্য করি সরকারের রাজস্ব আদায় দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চললেও (আজ 'রাজ্যের আর্থিক হাল পোস্টে বিস্তারিত দেওয়া আছে) সরকার বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থার কথাই হলফনামা দিয়ে কোর্টকে অবগত করেছেন। আমরা জানি আইন প্রমাণ ছাড়া গ্রাহ্য হয় না। তাই বিগত বাম এবং বর্তমান সরকারের বাজেট প্রিভিউ মহামান্য মান্য উচ্চ আদালত থেকে ট্রাইবুনালে পেশ করেছিলাম। আপনারা সকলেই জানেন ট্রাইবুনালের শেষ সওয়াল জবাবেও সরকারী আইনজীবি সেই সরকারের আর্থিক হালকেই তুলে ধরেন। ফল স্বরূপ আমাদের আইনজীবি মাননীয় সর্দার আমজাদ আলি তাকে খন্ডন করে জোড়ালো বক্তব্য প্রকাশ করেন। স্যাটের রায়ে সরকারের আর্থিক হাল নিয়ে মাননীয় দুই বিচারপতি কি মন্তব্য করেছেন তা আর ব্যক্ত করছি না। আজ রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের মহার্ঘভাতা আইনি অধিকার লাভ করেছে। আমরা বলতেই পারি রাজ্য সরকার আজ প্রতিটি কর্মচারিদের কাছে ৠনী। গত ২০|১১|১৩ বিধানসভায় বিরোধীদের এক প্রশ্নের উত্তরে মাননীয়া বলেছিলেন,"কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘভাতা দিতে হবে এমন কোনও আইন নেই"।সে সময় মাননীয়া মহার্ঘভাতার নতুন মডেল চালু করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আজ দুটোই খারিজ হয়ে গেল।
১) ডিএ কর্মচারীদের আইনি অধিকার। ২) ডিএ দিতে হবে মূল্যসূচক অর্থাত এ আই সি পি আই অনুসারে।
এই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে গত ১০/০৮/১৯ নবান্নে ঘটাকরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলতে শোনা গেল, দেখুন সবাই, দেশের জাতীয় গড় উৎপাদন থেকে আমাদের রাজ্যের ১৮-১৯  গড় উৎপাদন (জিডিপি)র বৃদ্ধির হার ১২.৫৮% এসে দাঁড়িয়েছে।
এটা আমাদের তথ্য না।এটা কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব পরিসংখ্যান। বরং তাদের (কেন্দ্র) তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের গত আর্থিক বছরে ১৮-১৯ এ জিডিপি ছিল মাত্র ৫.৮%। আসলে অর্থমন্ত্রীর মতে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা কেন্দ্রের থেকে অনেক অনেক ভাল।
বলাবাহুল্য, এই রাজ্যে যে অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল, তা আর কেউ জানুক বা না জানুক, রাজ্যকর্মীরা যে খুব ভাল করে জানেন, তা সম্প্রতি
নিন্মে প্রদত্ত বামসরকারের ২০১০-২০১১ আর্থিক বছর  পরবর্ত্তী মোট রাজস্ব আদায় যে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে তার পরিসংখ্যান (নিন্মে প্রদত্ত) আমরা যে তুলে দিয়েছিলাম মহামান্য আদালতের কাছে। তাই তো মহামান্য আদালত বলেছেন,
মিঃ বাসু ( সরকারি আইনজীবি) আপনি বলেছেন রাজ্যের আর্থিক হাল ভাল না। কিন্তু আমরা ইনভেস্টিগেশন করে দেখেছি, ২০১০-১১ আর্থিক বছর পরবর্ত্তী আর্থিক বছরগুলিতে রাজ্যের আয় ক্রমাগত বেড়েছে এবং জিএসটি বছরগুলিতে তা আরো বেশি। তাই রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা যে খারাপ তা মেনে নিতে পারছি না।
এই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর কেন্দ্রের দেওয়া আর্থিক তথ্য চোখে পড়ে। কিন্তু কেন্দ্র যে পয়লা জুলাই থেকে আরও এক কিস্তি তথা ৫% মহার্ঘভাতা ঘোষনা করলেন, সেই বার্তা কি তাঁর জানা নেই? ৬ মাসের পে কমিশন ৪ বছর হতে চললেও যে আজও তা অধরা তাকি তিনি জানেন না। সম্প্রতি ডিএ মামলার রায়ের কপি তাঁর দপ্তরে জমা (০১|০৮) পড়লেও তা কার্যকরের সদিচ্ছা সরকারের কতটা তা কি তিনি সাংবাদিকদের বলতে পারতেন না? না,তাযে বারণ আছে তা রাজ্য কর্মীদের জানা আছে।
কারণ ডিএ মামলার রায় ঘোষনার দিন, মাননীয়া মধ্যমগ্রামে," গভর্মেন্টের টাকার অবস্থা ভাল নয়। এটা মাথায় রাখতে হবে।যা চাইছি তাই পাব ভাবা কিন্তু যাবে না। চাইলেই গভর্মেন্ট খরচ করতে পারবে তা নয়"।এমনটা ভাব,মনে হচ্ছে মাননীয়া তাঁর নিজের থেকে  রাজ্য কর্মীদের ডিএ,পে-কমিশন দেবে।
নিচের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান দেখুন। এহেন তথ্য আদালতে তুলে ধরে মাননীয়ার টাকা নেই টাকা-এর গলাবাজি বন্ধ করে দিয়েছি।
বকেয়া ডিএ সহ মূল্যসূচক অনুসারে রাজ্যকর্মীদের ডিএ সরকারকে দিতেই হবে।
এই ভরসাটুকু আমাদের সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভঃ এমপ্লয়িজ (আই এন টি ইউ সি) দিয়ে রাখছে।কারন রাজ্য সরকার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে গেলে আমরা তার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।।

ক)২০১০-২০১১ রাজ্যে মোট    প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ২১১২৮.৭৪ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ২৩৮০.৫০
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ১৫৯৫৪.৯৫
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ৭৮০০.০১    .
১০-১১ তে রাজ্যে মোট আয়
     ৪৭২৬৪.২০ কোটি টাকা
===================
খ)২০১১-২০১২ রাজ্যে মোট প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ২৪৯৩৮.১৬ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ১৩৪০.২৫
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ১৮৫৮৭.৮১
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ১৩৮৮৮.৮২  .
১১-১২ তে রাজ্যে মোট আয়
     ৫৮৭৫৫. ০৪ কোটি
===================
গ)২০১২-২০১৩ রাজ্যে মোট    প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৩২৮০৮.৪৯ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ১৯১৮.১৫
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ২১২২৬.২৭
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ১২৩৪২.৮৪    .
১২-১৩ তে রাজ্যে মোট আয়
     ৬৮২৯৫.৭৫ কোটি টাকা
===================
ঘ)২০১৩-২০১৪ রাজ্যে মোট প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৩৫৮৩০.৫৬ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ২০২২.৭২
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ২৩১৭৫.০২
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ১১৮৫৩.৪৭  .
১৩-১৪ তে রাজ্যে মোট আয়
     ৭২৮৮১.৭৯ কোটি
===================
ঙ)২০১৪-২০১৫ রাজ্যে মোট    প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৩৯৪১১.৯৬ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ১৬২৬.৬৬
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ২৪৫৯৪.৯৫
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ২০৮৮০.৬৪    .
১৪-১৫ তে রাজ্যে মোট আয়
     ৮৬৫১৪.২১ কোটি টাকা
===================
চ)২০১৫-২০১৬ রাজ্যে মোট প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৪২৪৯২.০৮ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ১৮৬১.৭৯
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ৩৭১৬৩.৯৩  .
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ২৮২১৪.৪১ .
১৫-১৬ তে রাজ্যে মোট আয়
     ১০৯৭৩২.২১ কোটি
===================
ছ)২০১৬-২০১৭ রাজ্যে মোট    প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৪৫৪৬৬.৪৬ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ২৯৪৯.৮৬
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ৪৪৬২৫.১৬
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ২৪৭৯০.৯৭    .
১৬-১৭ তে রাজ্যে মোট আয়
     ১১৭৮৩২.৪৫ কোটি টাকা
===================
জ)২০১৭-২০১৮ রাজ্যে মোট প্রকৃত আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৫৭৭০০.৭৩ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ৩১১৭.১৭
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ৪৪৩৪০.৯৪
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ২৬১১১.৫৫    .
১৭-১৮ তে রাজ্যে মোট আয়
     ১৩১২৭০.৩৯ কোটি টাকা
===================
ঝ)২০১৮-২০১৯ রাজ্যে মোট
            রিভাইজড আয় :
১) নিজস্ব কর
     ৬০০৭৮.৮২ কোটি টাকা
২) কর বর্হিভূত আয়
     ৪১৫৩.৯৮
৩)কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ
    ৫৭৭২২.৫০
৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান
    ৩০৬৭০.১৮    .
১৮-১৯ তে রাজ্যে মোট আয়
     ১৫২৬২৫.৪৮ কোটি টাকা
===================
এত টাকা রাজস্ব আদায়ের পরও ৬ বছরে আমাদের বেতন-পেনশনের বাজেট বরাদ্দ খাত থেকে সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি এক কথায় মেরে দিয়েছে।।

Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.