অর্ক সানা: দিলীপ ঘোষ, সর্বদা সহাস্য অমিতবাক এবং সাধারন। তিনটে শব্দই তাঁর নামের বিশেষন হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। রাজ্য বিজেপির সেনাপতি হিসেবে যখন তাঁকে নিযুক্ত করা হয় তখন রাজনিতীর সাথে তাঁর সেভাবে পরিচয় নেই। সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য দিলীপ হয়তো খাবি খাবেন বিজেপি-র দায়িত্ব সামলাতে, এমনিতেই তো রাজ্যে চালচুলো নেই। যারা দাইত্বে আছেন তাঁদের অবস্থা ধর কাছি তো ধরে আছি-র মতই। কিন্তু সবাই কে অবাক করলেন দিলীপ ঘোষ। রাজনৈতিক বাক্যালাপে অপটু দিলীপ যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন পাড়া-প্রতিবেশীর ভাষায়। কখনও কখনও ভুল হয়ে যায়! কখনও কখনও উদ্ধত রগচটা অসহনশীল ভাব বেরিয়ে আসে, কিন্তু এটাই বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল সরকারের সম্ভাব্য পতনের মূল কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী হয়েছে বাম-কংগ্রেস। রাজ্যের বাম সমর্থক তথা কর্মীরা ক্রমাগত আক্রমনের শিকার হয়েছেন সেই ২০০৯ সাল থেকেই, একের পর এক পার্টি অফিস দখল নেওয়া থেকে শুরু করে বাম কর্মীদের এলাকা ছাড়া করেছে রাজ্যের শাসক দল। তখন মাথার ছাতা হিসেবে নেতাদের সেভাবে পায়নি বেশির ভাগ বাম কর্মী-সমর্থক। শূন্যতা দিন দিন হাহাকার ধারন করছিল, নেতা এবং ছাতা খুঁজছিল বাম সমর্থক রা। সেই প্রেক্ষাপটেই আবির্ভাব দিলীপ ঘোষের। অজন্ম আরএসএস - বিজেপি বিরোধী বাম কর্মী সমর্থকরা দেখলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তাঁদের মনের কথা বলছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ভাষাতেই জবাব! মারের বদলা মার! হুমকির বদলে হুমকি! রামে কিছুটা আপত্তি থাকলেও বাম সমর্থকরা ২০১৬ নির্বাচন থেকেই কিছুটা মুখ ঘোরালেন বিজেপি-র দিকে। মনে ভাবনা তাহলে তৃণমূল কে ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত বিজেপি?
ততদিনে মুকুল রায় কে দলে যোগদান করিয়ে "কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার" কাজ শুরু করে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। অন্যদিকে বাম সমর্থকদের ইতস্তত ভাবটা কাটল ২০১৭র শেষের দিকে, যার হাতেনাতে ফল পাওয়া গেল ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে। ভোট লুঠ, প্রার্থী না দিতে দেওয়া সব কিছু উপেক্ষা করে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এল বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ততক্ষনে সিপিআইএম থেকে টার্গেট সরিয়ে লক্ষ স্থির করে নিয়েছেন বিজেপি-র দিকে। স্লোগানে মুখরিত বাংলা, ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। চুপচাপ দেখছিলেন আর মুচকি হাসছিলেন দিলিপ ঘোষ, পাশাপাশি মিডিয়ার সামনে বাক্যবানে বিদ্ধ করছিলেন চরম প্রতিপক্ষ তৃণমূল কে। টিভি চ্যানেলের ডিবেট হোক বা জনসভা সব জায়গাতেই সাবলীল উত্তর, মারের বদলা মার। মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাম সমর্থকদের মনের কথা, যেটা তারা নিজেদের নেতার কাছে প্রত্যাশা করে হতাস হয়েছে বার বার।২০১৯ এ দেশের সাথে সাথে রাজ্যের উত্তর দিল বাম জনতা, এক লাফে বিজেপি ২ থেকে ১৮!
অন্য প্রসঙ্গে আসি, কাউন্টিং চলছে অন্যদিকে প্রতিপক্ষ মানস ভুঁইয়া। এগোতে শুরু করলেন দিলীপ ঘোষ। ইভিএম গননা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ফোন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। অভিনন্দন জানিয়ে প্রস্তাব দিলেন মন্ত্রী হওয়ার, কিন্তু কি অদ্ভুত! বিনয়ের সাথে সেই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গেই ফেরালেন দিলীপ ঘোষ।
প্রধানমন্ত্রী কে জানিয়ে দিলেন তিনি রাজ্যেই থাকতে চান, তৃণমূল কে নির্মূল না করা পর্যন্ত তিনি থামবেন না! ফোনের ওপারে প্রধানমন্ত্রী উত্তরে তখন কি বলেছিলেন আমার জানা নেই। কিন্তু দিলীপ ঘোষ মন্ত্রী হচ্ছেন না রাজ্যেই থাকছেন জানলে পাহাড় থেকে সমুদ্র আপামর গেরুয়া ব্রিগেড যে খুশি হবেন তা বলাই বাহুল্য। কারন তাঁরা চাইছেন রাজ্যে থেকে রাজ্যপাটের দায়িত্ব নিন দিলীপ ঘোষ। ইঙ্গিতটা খুব পরিষ্কার... বাকিটা সময়ের ওপর নির্ভরশীল।
No comments