নিজের ব্যর্থতার বিরুদ্ধেই 'ধরনা'য় মমতা, ভেঙে পড়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা!
নরেশ জানা, নজরবন্দি: ৫০ বছর পরে কার্যত নিজের সরকারের বিরুদ্ধেই অনাস্থা পোষণ করে ধারনায় বসছেন বাংলার একজন মূখ্যমন্ত্রী। ১৯৬৯ সালে নিজেরই সরকারকে 'বর্বর সরকার' বলে তারিখ , স্থান অবস্থানে বসে ছিলেন মূখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জী। আদতে মুখার্জীর উদ্দেশ্য ছিল সরকারের মধ্যে থাকা সংখ্যা গরিষ্ঠ সিপিআইম(যাদের দয়ায় তিনি মূখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন)কে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে সরকারের পতন ঘটনানো এবং তিনি তা করেও ছিলেন যার পরিনতিতে সত্তর দশকের কালো দিন দেখতে হয় বাংলাকে।
অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে বৃহস্পতিবার মমতা ব্যানার্জী নৈহাটি পৌরসভার সামনে ধারনায় বসছেন, ঘর ছাড়াদের ঘরে ফেরাতে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রশ্ন হল ঘরছাড়া দের ঘরে ফেরাবে কে ? সন্ত্রাস বন্ধ করার দায়িত্ব কার ? সব দায়টা তো তারই সরকারের! আরও স্পষ্ট করে বললে তাঁরই কারন তিনি নিজেই তো পুলিশমন্ত্রী ! আর রাজ্যের আইন শৃংখলা কি কেন্দ্র এসে রক্ষা করবে? অর্থাৎ যে কাজটা তাঁর করার কথা সেটা তিনি করছেননা উল্টে যেটা বিরোধীদের করার কথা, সরকারের অপদার্থতার বিরুদ্ধে ধর্ণা ইত্যাদি সেটাই তিনি করছেন। সোজা কথায় তিনি নিজেই শাসক আর বিরোধী দুটোই অবস্থানে থাকতে চাইছেন অথবা বলা উচিৎ নতুন করে তিনি বিরোধী সাজতে চাইছেন। কেন ? কারন তিনি উপলব্ধি করেছেন যে মানু্ষের কাছে তিনি বিরোধী হিসাবে যতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছিলেন , শাসক হিসাবে ততটাই ব্যর্থ হয়েছেন। আর এই উপলব্ধি থেকেই তিনি নিজের 'বিরোধী নেত্রী' ইমেজ ফেরাতে মরিয়া।
যদিও সমস্যা এটাই যে আজকের জায়গায় দাঁড়িয়ে এটা আর সম্ভব নয়। ক্ষমতায় থেকে বিরোধিতার ইমেজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন জ্যোতি বসু। রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থেকে, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা , কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস, কেন্দ্র বিরোধী আঞ্চলিক দল সমূহের জোট, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ইত্যাদি নানা তত্ত্বে দশকের পর দশক জুড়ে এমন একটি অবস্থানে রাজ্যকে নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে রাজ্যের মানুষ এটা বিশ্বাস করেছিল যে সত্যি কেন্দ্রের কারনেই রাজ্যের সমস্যাগুলির সমধান সম্ভব হচ্ছেনা। সত্যি মিথ্যা পরের কথা কিন্তু বাস্তব এটাই যে জ্যোতি বসু এই ইমেজ নির্মানে সক্ষম হয়েছিলেন কিন্তু রাজ্যের আইন শৃংখলার অবনতির জন্য বসু অন্য কাউকে দায়ি করেননি।
মমতা ব্যানার্জী ইদানিং কালে সেই জ্যোতি বসু আমলের কথা গুলির পুনরাবৃত্তি চেষ্টা করেছেন। সেই ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ , যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো , কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ইত্যাদির কথা তুলে আনার চেষ্টা করেছেন বটে কিন্তু মানুষ আর বিশ্বাস করছেনা। কেন ? কারন জ্যোতি বসুরা যা করেননি মমতা তাই করেছেন।
জ্যোতিবাবু, বুদ্ধবাবুরা কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিজদের নামে চালাননি বরং কেন্দ্রের নামে চালিয়েই বলেছেন, 'কেন্দ্র আরও অনেক কিছুই দিতে পারত কিন্তু মাত্র এই টুকুই দেয়! মানু্ষের কাছে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। উল্টো দিকে মমতা বলছেন, রাজ্যও যখন টাকা দেয় তখন রাজ্যের নাম থাকবেনা কেন ? মানুষ পাল্টা প্রশ্ন করতে ভয় পায় এই আমলে তাই প্রশ্ন করেনি, 'কেন্দ্র দেয় ? তবে যে বলা হয় কেন্দ্র কিছুই দেয়না ! ' কেন্দ্র সরকার আয়ুষ্মান ভারত চালু করল মমতা বলল চালু করতে দেবনা! কেন? মমতা বললেন , আমাদের স্বাস্থ্যসাথী আছে ! গ্রামে শহরে খবর নিলে দেখা যাবে প্রথম দফার স্বাস্থ্যসাথীর পর দ্বিতীয় দফায় কাজ হয়নি। লাখো লাখো পরিবার এর আওতায় আসেনি। তারা আশা করেছিলেন ' আয়ুষ্মান ভারত' সেই ঘাটতি মেটাবে। মমতা তা হতে দেননি। ঘূর্ণিঝড় ফনীর দুর্যোগ সামলাতে কেন্দ্র ২৯০কোটি টাকা দিতে চাইল। পাছে ভোটে মোদী তার 'এ্যাডভান্টেজ' নিয়ে নেন তাই বললেন, 'তোমাদের টাকার দরকার নেই , আমরাই সামলে নেব !' মানু্ষের প্রশ্ন , তাহলে যে বলা হয় কেন্দ্র টাকা দেয়না! আমার টাকা থাকলেই আমি আমার প্রাপ্য টাকা নেবনা তারপরও বলব , কেন্দ্র টাকা দেয়না! এসব চলে ? ফলে মমতা তাঁর কেন্দ্রবিরোধী ইমেজটাও সততার সংগে নির্মান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর সেই ব্যর্থতা এখনও বহাল। বললেন, 'সংবিধানিক সৌজন্য' দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাব । প্রশ্ন উঠল, নির্বাচন চলাকালীন ফনীর দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ফোন এড়িয়ে যাওয়া , কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর আহুত বৈঠককে ' এক্সপায়ার প্রাইম মিনিষ্টার' বলে না যাওয়ার সময় এই ' সংবিধানিক সৌজন্য' কোথায় ছিল ?
এরপর 'আরাজনৈতিক' খুন নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে আবার সেই শপথ গ্রহনে না যাওয়া! আবারও প্রশ্ন, ত্রিলোচন মাহাতদের খুনটা রাজনৈতিক খুন নয় ? যাকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার আগে গায়ে লিখে দেওয়া হল , '' অল্প বয়সে বিজেপি করার শাস্তি।'' রাজ্যের সিআইডি যে খুনের অপরাধে তৃণমুলের সভাপতিরই ছেলেকে গ্রেপ্তার করল! প্রশ্নও আরও সভার পাশে মৃতদের পরিবারকে রাখার জন্য পৃথক মঞ্চ তৈরি করার রাজনীতিটা শুরু করল কে।
আর সর্বশেষ, নিজের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে নিজেই ধারনায় বসবেন, ভাল কথা কিন্তু তারজন্য বৃহস্পতিবারই বাছতে হল কেন? নৈহাটি , কাঁচড়াপাড়ায় গন্ডগোলটা আজ কিংবা কাল শুরু হয়নি ! কয়েকদিন ধরেই চলছে । বুধবার বসতে পারতেন , শুক্রবার বসতে পারতেন। তা না করে বৃহস্পতিবারই কেন? কি ভাবলেন , সারা দুনিয়া প্রধানমন্ত্রীর শপথ না দেখে নৈহাটির দিকে তাকিয়ে থাকবে ? যদি কেউ থাকে, যে কজনই থাকে তারাও তো একই প্রশ্ন করবেন, ধরনাটা কার বিরুদ্ধে ?
অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে বৃহস্পতিবার মমতা ব্যানার্জী নৈহাটি পৌরসভার সামনে ধারনায় বসছেন, ঘর ছাড়াদের ঘরে ফেরাতে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রশ্ন হল ঘরছাড়া দের ঘরে ফেরাবে কে ? সন্ত্রাস বন্ধ করার দায়িত্ব কার ? সব দায়টা তো তারই সরকারের! আরও স্পষ্ট করে বললে তাঁরই কারন তিনি নিজেই তো পুলিশমন্ত্রী ! আর রাজ্যের আইন শৃংখলা কি কেন্দ্র এসে রক্ষা করবে? অর্থাৎ যে কাজটা তাঁর করার কথা সেটা তিনি করছেননা উল্টে যেটা বিরোধীদের করার কথা, সরকারের অপদার্থতার বিরুদ্ধে ধর্ণা ইত্যাদি সেটাই তিনি করছেন। সোজা কথায় তিনি নিজেই শাসক আর বিরোধী দুটোই অবস্থানে থাকতে চাইছেন অথবা বলা উচিৎ নতুন করে তিনি বিরোধী সাজতে চাইছেন। কেন ? কারন তিনি উপলব্ধি করেছেন যে মানু্ষের কাছে তিনি বিরোধী হিসাবে যতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছিলেন , শাসক হিসাবে ততটাই ব্যর্থ হয়েছেন। আর এই উপলব্ধি থেকেই তিনি নিজের 'বিরোধী নেত্রী' ইমেজ ফেরাতে মরিয়া।
জ্যোতিবাবু, বুদ্ধবাবুরা কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিজদের নামে চালাননি বরং কেন্দ্রের নামে চালিয়েই বলেছেন, 'কেন্দ্র আরও অনেক কিছুই দিতে পারত কিন্তু মাত্র এই টুকুই দেয়! মানু্ষের কাছে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। উল্টো দিকে মমতা বলছেন, রাজ্যও যখন টাকা দেয় তখন রাজ্যের নাম থাকবেনা কেন ? মানুষ পাল্টা প্রশ্ন করতে ভয় পায় এই আমলে তাই প্রশ্ন করেনি, 'কেন্দ্র দেয় ? তবে যে বলা হয় কেন্দ্র কিছুই দেয়না ! ' কেন্দ্র সরকার আয়ুষ্মান ভারত চালু করল মমতা বলল চালু করতে দেবনা! কেন? মমতা বললেন , আমাদের স্বাস্থ্যসাথী আছে ! গ্রামে শহরে খবর নিলে দেখা যাবে প্রথম দফার স্বাস্থ্যসাথীর পর দ্বিতীয় দফায় কাজ হয়নি। লাখো লাখো পরিবার এর আওতায় আসেনি। তারা আশা করেছিলেন ' আয়ুষ্মান ভারত' সেই ঘাটতি মেটাবে। মমতা তা হতে দেননি। ঘূর্ণিঝড় ফনীর দুর্যোগ সামলাতে কেন্দ্র ২৯০কোটি টাকা দিতে চাইল। পাছে ভোটে মোদী তার 'এ্যাডভান্টেজ' নিয়ে নেন তাই বললেন, 'তোমাদের টাকার দরকার নেই , আমরাই সামলে নেব !' মানু্ষের প্রশ্ন , তাহলে যে বলা হয় কেন্দ্র টাকা দেয়না! আমার টাকা থাকলেই আমি আমার প্রাপ্য টাকা নেবনা তারপরও বলব , কেন্দ্র টাকা দেয়না! এসব চলে ? ফলে মমতা তাঁর কেন্দ্রবিরোধী ইমেজটাও সততার সংগে নির্মান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর সেই ব্যর্থতা এখনও বহাল। বললেন, 'সংবিধানিক সৌজন্য' দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাব । প্রশ্ন উঠল, নির্বাচন চলাকালীন ফনীর দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ফোন এড়িয়ে যাওয়া , কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর আহুত বৈঠককে ' এক্সপায়ার প্রাইম মিনিষ্টার' বলে না যাওয়ার সময় এই ' সংবিধানিক সৌজন্য' কোথায় ছিল ?
Loading...
কোন মন্তব্য নেই