Header Ads

বর্তমান রাজনৈতিক মূল্য বোধের সামনে দাঁড়িয়ে খোলা চিঠি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কে।

নজরবন্দিঃ মাননীয় বুদ্ধবাবু,
দিনের কোলাহল শান্ত হয়েছে। এখন আপনাকে নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে হল। আপনি নিশ্চয় ভালো আছেন। আজ এই উন্মাদ সময়ে দাঁড়িয়ে যখন দেখি,রাজনীতিতে যখন দুর্নীতির নিকষ কালো ছায়া প্রতিদিন প্রলম্বিত হচ্ছে,আত্মবিক্রয়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের নগ্ন উল্লাস নতুন প্রজন্মের সামনে বিষাক্ত বিষব্রণ - ভরা বিকট রাজনৈতিকতার জন্ম দিচ্ছে,ব্যক্তিঘৃণা যখন দীর্ঘ-লালিত রাজনৈতিক মূল্যবোধ এর ধ্বংসস্তূপ তৈরি করছে, তখন আপনি কীভাবে নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখেন বলুন তো। মন্ত্রিত্ব করলেন, মুখ্যমন্ত্রীত্বের আসন অলংকৃত করলেন, তবু কোটিপতি হতে পারলেন না, সবাই কত কিছু করে নিল, রাজনীতিতে করে খেল, আর আপনি কী করলেন বলুন তো।

সারা জীবন ওই ৮০০ স্কোয়ার ফিটের দু-কামরার বাড়িটায় কাটিয়ে দিলেন।আজ সেই বাড়িটাও তো জীর্ণতায় আক্রান্ত,তবু কি নির্বিকার আপনি। গাদাগাদা বই বোঝাই করেছেন, ধনের যক্ষপুরী বানাতে পারেননি ওই স্বর্গটাকে, প্রতিদিন রাত্রে কোনো চিটফান্ডের মালিকের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেননি ,জর্জ বিশ্বাসের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের মূর্ছনায় কান জুড়াতে জুড়াতে ঘুমিয়েছেন।কি করে করলেন বলুন তো। প্রেসিডেন্সির মেধাবী ছাত্র হয়েও, ত্যাগ ও সংগ্রামের আর এক নাম কবি সুকান্তের ভাইপো হয়েও কোনোদিন বড় বড় হোর্ডিংয়ে সেগুলোকে রাজনৈতিক মোক্ষ লাভের ও আত্মগরিমা প্রচারের কালো মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করেননি।মনে পড়ছে,অনেক কিছু মনে পড়ছে। আপনাকে কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ের মতো বিকৃত মানুষ ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন কদর্য ভাষায়, যা মমতা দেবীও কোনোদিন করেননি,আপনার শিক্ষা নিয়ে সৌগত রায় ব্যঙ্গ করেছেন।কিন্তু ইতিহাসের কি নির্মম আঘাত দেখুন,কদিন আগেই কল্যাণ বাবু অসংলগ্ন অবস্থায় মঞ্চে এক মহিলার হাত ধরে নাচানাচি করলেন,সৌগত বাবু তো আজ অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কালি মেখে মুখ লুকিয়েছেন। তবু আপনি তো কোনোদিন এই অন্যায় আঘাত ফিরিয়ে দেননি,বীরের ঔদার্য ও মহত্ত্ব দিয়ে তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছেন।
নিন্দার কণ্টকাকীর্ণ মালা কে জয়মাল্য জেনেছেন।আরও কত নোংরা আক্রমণ ধেয়ে এসেছে,আপনি নাকি নরোখাদক, আপনার পরাজয়ে নাকি রাজনীতি শুদ্ধ হয়েছে....যারা বলেছিল সেই শুভাপ্রসন্ন আর কুনাল ঘোষের আজকের অবস্থা দেখুন। তবু আপনি কি করে উদাসীন ছিলেন।এই বিষ কণ্ঠে ধারণ করে আপনি নীলকণ্ঠ হয়েছেন,বুক হয়ত আপনার ফেটেছে কিন্তু মুখ ফোটেনি। ....শুধু কি তাই। আপনি যে গ্রন্থ রচনা করেছেন মায়কভস্কির কবিতার অনুবাদ,জীবনানন্দকে নিয়ে' হৃদয়ের শব্দহীন জোৎস্নার ভিতর','মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে' পুড়ে যায় জীবন নশ্বর' ....এগুলো আপনার সারস্বত সাধনার অঘ্রানী ফসল। না তারজন্য কোনোদিন উপাধি ভিক্ষা করেননি।কেন কমরেড? কমরেড মানব মুখার্জি যখন ফ্যাসিবাদের উপর একটি বই লিখেছেন,তখন তার ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন...'আমার পক্ষে একটি জটিল তাত্ত্বিক বিষয়ে অনভ্যস্ত পদচারণায় আমি সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছি কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে। গোটা একটি বই তুলে দিয়ে বলেছি ,বুঝতে পারছি না,দুদিন পরে ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন,পরামর্শ দিয়েছেন কী পড়া উচিৎ,কীভাবে বিষয়গুলো দেখা উচিৎ।' কি নীরব সরবতা আপনার।আপনি ট্রাফিক সিগনালে রবীন্দ্রনাথ শোনেননি,অনুধ্যান এ স্পন করেছেন তাঁকে।অথচ আঁত লামি করেননি।কেন? মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় তাই আপনার উপর।এই প্রচার সর্বস্ব রাজনীতির জগতে আপনি রবীন্দ্রনাথের' ঘরে বাইরে' এর নিখিলেশ থেকে গেলেন। অন্ধগলিতে হারিয়ে যাওয়া ভারতীয় রাজনীতিতে আপনাকে কে বুঝবে বলুন।জানি,তবুও আপনি নিরাসক্ত ধ্যানের আসনে সমাসীন এক মহান পুরুষ হয়েই থেকে যাবেন।
আমি চিৎকার করে সারা দুনিয়াকে বলতে পারি,আমি সেই গণ সংগঠনের একজন সৈনিক,যার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আপনি। যখন জেনেছি,আমার জেলায় গুটিকয়েক মানুষকে নিয়ে আপনি সাইকেলে করে গোটা জেলা ঘুরে সংগঠন তৈরি করেছেন,আমার শীর্ণকায় শরীর গর্বে স্টালনের দেহসৌষ্ঠব কেও হার মানিয়ে দেয়।জীবনে অন্তত একবার ক্যমুনিস্ট পততকল ভেঙে আপনার পা ছুঁতে চাই,নতনিষ্ঠ প্রণাম করতে চাই আপনাকে।এ রাজ্যের মানুষ আপনাকে চিনতে পারেনি।কিন্তু আমি নিশ্চিত একদিন তারাই আপনার নাম পাঠিয়ে দেবে অনন্তকালের কাছে ব্যাকুল প্রতীক্ষায়,বিচার প্রার্থনায়। খুব ভালো থাকুন কমরেড ।লাল সেলাম।

সংগৃহীত, অনির্বাণ।
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.