Header Ads

সরকারি কর্মী..চাকরিপ্রার্থী, টাকা নেই..দানছত্র এবং মুখ্যমন্ত্রী! #Editorial

অর্ক সানা, সম্পাদক(নজরবন্দি): চাকুরি ক্ষেত্রে নিয়মিত নিয়োগের কথা ভুলে গেছে চাকরি প্রার্থীরা। চাকরি চাওয়ার আন্দোলন দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছে রাজ্যের জনগন! শুধু ক্লান্ত হয়নি সরকার। গত কয়েক বছরে যে কত চাকরি প্রার্থী কোর্টে গেছেন আর কত চাকরি প্রার্থী আন্দোলনে নেমেছেন তা হিসেবের বাইরে। নতুন্দের চাকরি নেই কিন্তু রিটায়ার্ডমেন্টের বয়েশ বাড়ানো হচ্ছে সরকারি কর্মীদের। রিটায়ার্ড করার পরেও অনেক ক্ষেত্রে কম বেতন দিয়ে তাদেরকেই দায়িত্বে রাখা হচ্ছে আর এদিকে সরকারি চাকরি, শিক্ষকতার শূণ্য পদ যেন মরুভূমির মত খাঁ খাঁ করছে! কেন চাকরি দেওয়া যাচ্ছে না? টাকা নেই বেতন হবে কোত্থেকে?
পাশাপাশি সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য বেতন, ডিএ হচ্ছেনা কেন? টাকা নেই! দাবি তুললেই মুখ্যমন্ত্রী গলা উঁচিয়ে আঙুল তুলে বলেন,"সব সময় এটা দাও, ওটা দাও বললে হবে না। সরকারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, এটা বুঝতে হবে। টাকা আসবে কোত্থেকে?"  প্রশ্ন এখানেই, সরকারে বসার সময়ই তো জানা ছিল সরকারি কর্মীদের বেতন দেওয়া সরকারের দায়িত্ব আগে বাম জমানায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ১৬% ডিএ-র গ্যাপ থাকলেও বলতেন সরকারি কর্মীদের বঞ্চনা করছে বাম সরকার! আর এখন ফারাক ৫৬%। তবে ফারাক শুধু শতাংশে নয় ফারাক তাঁর গলার সুরেও। আসলে বিরোধী নেত্রী আর মুখ্যমন্ত্রী তো এক জিনিশ নয়!  ডিএর দাবিকে ঘেউ ঘেউ মনে হলেও, এক কালে সেই ঘেউ ঘেউ দাবিতে রীতিমত সরব থাকতেন তিনি।
যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, 'টাকা নেই'!
টাকা নেই তো বোঝা গেল কিন্তু সরকারের এই আর্থিক দুরবস্থার দায় কার?
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন বেলায় বলতেন আগের সরকার ঋণে ডুবিয়ে দিয়ে গেছে রাজ্যটাকে। তখন দেনা ছিল কতো?  ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা! প্মরশ্তোন হল এই দেনা কতদিনের? ১৯৭৭ সালে বাম সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যের মাথায় দেনা ছিল প্রায় ৭০হাজার কোটি টাকা। তার পর ৩৪ বছরে সেই ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকায়। যদিও এই ঋনের একটা বড় অংশের কারন ছিল সেল্প হেল্প গ্রুপ। সে প্রসঙ্গ থাক, পুরোপুরি ধরলে বামফ্রন্ট ঋন করেছিল ৩৪ বছরে ১ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকা।
আর মামাটি মানুষের সরকারের আমলে সেই ঋণ ছাড়িয়ে গেছে ৪ লক্ষ কোটি টাকা! অর্থাৎ ৮ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঋণ করেছে প্রায় ২ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকা! তবুও নেহার অমিত মিত্রের মত একজন অর্থমন্ত্রী আর রাজ্য জুড়ে সরকারি কর্মচারিরা আছেন বলে বহু পাগলামি-র মধ্যেও সরকারটা চলছে বলে মনে করেন অনেকেই। অমিত মিত্রের অবস্থা ভাবলেই বরং খারাপ লাগে।
তা এত টাকা ঋণ আপনি নিলেন কেন মুখ্যমন্ত্রী? উন্নয়ন! সত্যি উন্নয়ন বলে উন্নয়ন। দেখি এক ঝলকে।

ত্রিফলা
ক্ষমতায় এসেই বসিয়ে দিলেন ত্রিফলা আলো! ভেপার লাইট, হ্যালোজেনের নিচে বসানো এই আলো কোন কাজে লাগল? কোটি কোটি টাকার নয়ছয় ছাড়া ত্রিফলা দিয়েছে টা কি! ত্রিফলা আলোকে দেখতে গেলে অন্য আলো লাগে! অর্থাৎ টর্চ মেরে চাঁদের আলোয় হাঁটার মত! এই ইনভেস্টমেন্ট যে একবারে হয়ে গেল তা নয়। এক একটায় তিনিটে আলো, কত টাকার বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় মাসে মাসে সে হিসেব রাখেন? সবই তো জনগনের টাকা!

নিল সাদা এলইডি চেন! 
ত্রিফলা লাগিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, ত্রিফলা সহ সব ফলা মায় বিদ্যাসাগর সেতুর টান দেওয়া ইস্পাতেও জড়িয়ে দিলেন নীল সাদা এলইডি চেন! কত চেন জড়ানো হয় আর কত চেন ছিড়ে গড়াগড়ি খায় রাস্তায় তাঁর হিসেব আছে? এগুলো কিনতে টাকা লাগেনি? এত বিদ্যুৎ খরচ নেই! টাকা নেই যদি জনগনের টাকার এত অপচয় কেন?

নীল সাদা রঙ! 
মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রঙ নীল সাদা, সুতরাং রাজ্যের সরকারি সব কিছুতে নীল সাদা রঙ লেপতে থাক! কে বারন করবে? পাবলিকের টাকা তো অসুবিধা কি আছে! তাছাড়া এই নীল সাদা রঙের তলায় কি কোন দূর্নীতি নেই? রঙ হল ভাল কথা। কিন্তু এত ঘন ঘন রঙের ওপর রঙ কেন? রঙ করার নিয়ম পুরোনো রঙ ঘষে তুলে দিয়ে রঙ করা। কিন্তু নেই রাজ্যে এত অপচয়ের টাকা আছে যে ধুলো জমলেই করা হয় নতুন রঙ! তা টাকা থাকবে কোত্থেকে?

বিজ্ঞাপন!
জনগনের করের টাকায় পুজো, ইদ, খেলা, মেলা, এর জন্মদিন, তাঁর মৃত্যুদিন সব কিছুতেই এইগলি ওইগলি, এই পেপার সেই টিভি সব জায়গাতেই হাসি হাসি মুখের বিজ্ঞাপন! কেন? এত ভাল লাগে আত্মপ্রচার? টাকা লাগে না? টাকা থাকবে কিভাবে?

ছেলে খেলা! 
ছেলে খেলা বললাম তাঁর কারন আছে যদিও মেয়ে খেলাও বলা যায়। মা মাটি মানুষের মমতা সরকার রাজ্যে আসার পরেই শুরু হল নানা রকম খেলা, মেলা, উৎসব। সবলা, মাটি, ল্যাংচা আরও কত কি! লক্ষ লক্ষ টাকা বেফালতু খরচ। টাকা এল কোত্থেকে? এটাকে উন্নয়ন বলে?

সাইকেল, ব্যাগ, জুতো, ছাতা, খাতা! 
ব্যাগ জুতোটা নতুন কিন্তু সাইকেলটা বাম সরকার শুরু করেছিল। তখন যার প্রয়োজন তাঁকে দেওয়া হত, পারিবারিক অবস্থা খতিয়ে দেখে। বর্তমানে আপনি দায়িত্বে, বলা ভাল ঋণের টাকায় উদার মুখ্যমন্ত্রী! যার প্রয়োজন নেই তাকেও দিলেন সাইকেল, জুতো, ব্যাগ, ছাতা, খাতা। ফোকটে পেয়ে সাইকেল নিয়ে অর্ধেক দামে কতজন বেচে দিয়েছে সে হিসেব আছে? কত সাইকেল বিভিন্ন স্কুলে পড়ে পড়ে জং ধরার জন্ত্রনায় কাঁদছে সেই হিসেব আছে?  শুধু তাই নয় সাইকেল, ব্যাগ, জুতো দিতে গিয়ে যেসব আড়ম্বর পূর্ণ অনুষ্ঠান করা হয় আর বড় বড় কাট আউটে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তাতে হলফ করে বলা যায় সাইকেল কিনটে সরকারি টাকা যতনা খরচ হয়েছে তাঁর থেকে ঢের বেশি খর হয়েছে হাসি হাসি মুখের সবুজ সাথী বিজ্ঞাপন দিতে। এটা উন্নয়ন? টাকা নেই যখন এত টাকা অপচয় করার কি দরকার?


দানছত্র! 
দাতা কর্নও হেরে যেত বোধ হয়! বিষ মদ খেয়ে মরলে টাকা। ইমাম দের ভাতা, মেয়ের বিয়ে দিতে টাকা, দূর্গাপুজোতে টাকা, ক্লাবকে টাকা, সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে অগ্রদানী ব্রাম্ভন কে ভাতা দেওয়া! এমন আরও কত কি। এর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাবকে টাকা দেওয়া। তা কেন দিলেন টাকা? খোঁজ নিয়ে দেখেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ক্লাব গুলো কি করেছে? খেলাধুলো বা সমাজ কিসের উন্নতি করেছে? খোঁজ নিন ৯৯% ক্লাব ওই টাকায় ফুর্তি করেছে, ক্লাবের মাথাদের পকেট ভরিয়েছে। বলা বাহুল্য ক্লাব গুলির বেশির ভাগ মাথাই তৃণমূলের নেতা। কিন্তু এভাবে কি বেশি দিন চলে? খোঁজ নিয়ে দেখুন রাজ্য জুড়ে কটা ক্লাব আর তৃণমূলের হাতে আছে! অর্ধেক তো মনে হয় নতুন কিছু পাওয়ার ধান্দায় বিজেপি হয়ে গেছে। তাঁর প্রমাণ লোকসভার ভোট।
তা টাকা যখন নেই তখন ঋণ করে এত টা বিলোনোর কি দরকার ছিল?


বিভীষণ থুড়ি বিভূষন!
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর চালু হল, বিভিন্ন শ্রী... বিভূষন ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন একটা ভাব যেন আগে বাংলার কোন গুণী মানুষ সম্মান পেতনা। তা দিলেন ঠিক আছে কিন্তু টাকা খরচের কথাটা ভাববেন না? টাকা যে নেই!!

বিধায়ক, মন্ত্রী! 
বিধায়ক, মন্ত্রীদের বেতন দ্বিগুণ নয় কয়েক গুন বাড়ল, টাকা নেই।

পরজীবী! 
বুদ্ধিমান কিছু ব্যাক্তি যাদের বুদ্ধিজীবী বলা হয় তাঁদের ভরন পোষন করার জন্য সরকারের টাকায় কিছু কমিটি করা হল! বুদ্ধিজীবীরা পরজীবী হয়ে বসলেন সেই কমিটির মাথায়, অবশ্যই মোটা টাকার বিনিময়ে। সেই কমিটি গুলি এই আট বছরে কি কি কাজ করেছে কেউ জানেনা! কিন্তু টাকা নেই যে!

নাইট রাইডার্স! 
শাহরুখের নাইট রাইডার্স কাপ জিতল আর সোনার চেন দিল সরকার! টাকা নেই?


প্রশাসনিক বৈঠক! 
 জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক! মুখ্যমন্ত্রী বকে দেন সবাই মাথা নিচু করে বাধ্য ছেলে মেয়ের মত শূনে বাড়ি গিয়ে আবার একই কাজ করতে থাকে। স্টেজ, লাইট কত খরচ কেউ জানে না! টাকা নেই?

চিটফান্ড মামলা! 
চিটফান্ডের লুট হল টাকা, এককালে যিনি সব কথায় সিবিআই বলে চিৎকার করতেন তিনি সেই সিবিআই আটকাতে জনগনের করের কোটি কোটি টাকা খরচ করলেন নামি দামি উকিলের পেছনে! কেন? দুদিকেই তো জনগনের লস! টাকাও গেল আবার সিবিআই আটকাতেও সেই জনগনের টাকাই গেল! কিন্তু সরকার কেন সিবিআই আটকানোর চেষ্টা করল? সরকার কি লুঠ করেছে চিটফান্ডের টাকা?


এবং এবং ও এবং! 
যুব বিশ্বকাপ হলো, স্কুলে স্কুলে পাঁচটা করে ফুটবল দেবার এক বিরাট মোচ্ছব হলো। কন্যাশ্রী বিদেশে প্রাইজ পেলো, শুরু এক মাস ব্যাপী উৎসব। একতাই সম্প্রীতি নামে কদিন চললো হুল্লোড়। আরও কত কিই না আছে...

যাই হোক সবই হচ্ছে যখন তখন এতবার টাকা নেই বলার কি দরকার? টাকা কি শুধু সরকারি কর্মীদের বেলায় নেই? তাঁরা ছাড়া তো রাজ্যের কোন কাজই হবে না! মাথায় রাখতে হবে মন্ত্রী সান্ত্রীরা নির্দেশ দিয়েই খালাস হয় বাকি সব সরকারি কর্মীরাই করে!
আমি ছাপোষা সাংবাদিক... বিক্রি হইনি এমনকি সরকারি বিজ্ঞাপনও পাইনা আমরা। তথা কথিত বড় সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকের যা করা উচিত সেটাই করলাম। পড়ে ভেবে দেখুন খুব অবান্তর কথা তুলে ধরলাম কি? প্রশ্ন করুন নিজেকে। 
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.