Header Ads

মাদ্রাসা নিয়ে মনগড়া গল্প-কাহিনী এবং প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে আমার মুল্যায়ন। লিখছেন মৃন্ময় দে

মৃন্ময় দেঃ ‘মাদ্রাসা’, তিন অক্ষরের এই শব্দটাকে ঘিরে গড়পড়তা মানুষের মতো আমিও আমাদের রাজ্যের সবধরনের মাদ্রাসাকেই বিভিন্নসময়ে বিভিন্নসুত্রে গড়ে ওঠা নানা অমূলক ভাবনা ও মনগড়া গল্পগুলোকে সঙ্গী করে মোটামুটি এক পংক্তিতে রেখে চলতাম এবং সেইসবগুলো যথারীতি মনের মধ্যে রয়েই যেতো যদি না পেশাগত কারনে স্মার্টক্লাসগুলোর বিষয়ে ইনস্পেকশনে এসে এইসব ‘সরকারি মাদ্রাসা’গুলোর শিক্ষা ও কর্ম পদ্ধতি সামনে থেকে সবিস্তারে প্রত্যক্ষ করতাম।

সহজ কথা এটাই যে, এইসব সরকারী মাদ্রাসাগুলোর সিলেবাস থেকে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া, মূল শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতিগুলো আমাদের আর পাঁচটা প্রচলিত স্কুলের মতোই। একমাত্র তফাত যেটুকু তা হলো প্রচলিত স্কুলের সিলেবাসের সাথে ‘ইসলামিক ইতিহাস’ বলে আরও একটা বিষয় থাকে এবং প্রচলিত স্কুলে যেখানে ক্লাস এইট থেকে অতিরিক্ত বিষয় হিসাবে সংস্কৃত থাকে সেখানে সরকারি মাদ্রাসাগুলোতে এর সাথে থাকে আরবি । এ প্রসঙ্গে এটাও উল্লেখ্য যে এই মাদ্রাসাগুলোতে সংস্কৃতও কিন্তু থাকে। এবং আরও যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে বলার এইসব মাদ্রাসাগুলোতে পড়ুয়ারা বাঙালি মুসলিম ছাড়াও অনেক হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীরা থাকে ও শিক্ষক -  শিক্ষিকারাও যেহেতু সরকারি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসেন তাই একই কথা প্রযোজ্য তাঁদের ক্ষেত্রেও অর্থাৎ বহু হিন্দু শিক্ষক ও শিক্ষিকা এই মাদ্রাসাগুলোতে পড়ান যাঁদের বেতনক্রম ও বাকী সমস্ত সুযোগ সুবিধা একইরকম। 

এমন হিন্দু শিক্ষকের সাথেও আলাপ হলো যিনি প্রথাগত স্কুলে সুযোগ পেয়েও দুরত্ত জনিত অসুবিধার জন্য স্বেচ্ছায় মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। আরও যা ভীষণ ভালোলাগার কথা আমাদের গ্রাম বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির যে চিরন্তন ঐতিজ্য তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ এইসব মাদ্রাসাগুলোতেও দেখা যায়। মাদ্রাসাগুলোতে যে মিড ডে মিলের রান্না হয় তার রাঁধুনি কিন্তু হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মেরই রয়েছেন। অর্থাৎ হিন্দুর হাতের রান্না মুসলিম ছাত্র – ছাত্রিরা ও প্রয়োজনে শিক্ষক–অশিক্ষক কর্মচারীরাও খান ও উল্টোটাও প্রযোজ্য যা আমাদের রাজ্যের চিরাতন ধর্ম সহিষ্ণুতার সাথে একদমই একাত্মতার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে এইসব মাদ্রাসাগুলো। সত্যি আমরা যে কতরকমের কাল্পনিক ভাবনা নিয়ে চলেছি প্রত্যহ যেমন মাদ্রাসা মাত্রই উর্দু ভাষার ব্যবহার হয়, ইসলামিক সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা হয়, ছাত্র - ছাত্রী থেকে শিক্ষকরা টিপিকাল ধর্মীয় পোষাক পড়ে, এমনকী নানা প্ররোচনামূলক মগজ ধোলাই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। 
কিন্তু এ সমস্ত ধারনা নিয়ে চলা মানে যাকে বলে 'মূর্খের স্বর্গে বাস করা'। সবথেকে ভালো লাগলো ছাত্র - ছাত্রী থেকে শিক্ষক সর্বস্তরেই সরকারী আনুকূল্যে তৈরী এই স্মার্টক্লাসগুলোর বিষয়ে চরম উৎসাহ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে। বরং এ কথা দায়িত্ত নিয়ে বলতে পারি যে এই স্মার্টক্লাসগুলোর ব্যাবহার ও তার রক্ষানাবেক্ষনের বিষয়ে আমাদের প্রথাগত স্কুলগুলোর থেকে মাদ্রাসাগুলোতে উৎসাহ ও দায়িত্তবোধ অনেক বেশি। এরা ভীষণভাবে চায় আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিকে আঁকড়ে ধরতে। আর হ্যাঁ, আরও একটা কথা বলার যে আমি অন্তত যে মাদ্রাসাগুলোতে পরিদর্শনে সেখানে কোথাও কিন্তু একজন ছাত্রি বা শিক্ষিকাকেও তথাকথিত বোরখা বা হিজাব পড়তে দেখিনি বা একজন ছাত্র বা শিক্ষককেও তথাকথিত ফেজ টুপি পড়তে বা লম্বা দাঁড়ি রাখতে দেখিনি, বরং কোনো কোনো শিক্ষক ও হেডস্যারের পকেট থেকে এমনকি আই ফোনও উঁকি মারতে দেখেছি।তবে একটা কথা অবশ্যই এখানে বলার যে, আমার এই পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন সবটাই আমাদের রাজ্যের সরকারি আনুকূল্যে ও অনুমোদনে চলা ‘হাই মাদ্রাসা’গুলোর ক্ষেত্রে। বাকী মাদ্রাসাগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু আমার কোনো নির্দিষ্ট ধারনা নেই। 

যাক পরিশেষে এটাই বলার যে, ' প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছাড়াই  সমাজের নানা ক্ষেত্রে এইভাবেই আমরা কতো ভ্রান্ত ধারণা ও তার ভিত্তিতে নানা মনগড়া গল্প-কাহিনী তৈরী করি যার সুযোগ নেয় আমাদের দেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারিগররা, আর মাঝখান থেকে হানাহানি ও প্রানহানি ঘটে আমাদের মতো সমাজের সাধারন মানুষদের। সবথেকে বড় কথা এইভাবেই সমাজের পারস্পরিক ভিতগুলো আলগা হয়ে পড়ে যার জের বহন করে চলে বর্তমানের সাথে পরবর্তী প্রজন্মও।
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.