Header Ads

শতাব্দী প্রাচীন তল্লী বীথিকা কাটাবার প্রতিবাদে আন্দোলনে সামিল কোচবিহারবাসী!#EXCLUSIVE

নজরবন্দি ব্যুরো: উনবিংশ শতাব্দীর শেষের লগ্ন থেকে কুচবিহারে শহর এবং শহরতলি-তে গড়ে উঠেছিলো অসংখ্য বীথিকাবিগত কয়েক দশকে এই ঐতিহ্যমণ্ডিত বীথিকাগুলির সব ক'টিই কাটা পড়ে গিয়েছে, একমাত্র শহরাঞ্চলে চিলারায় ব্যারাকের পূর্বদিকে নরনারায়ণ রোড বরাবর মাত্র চারটি তল্লীগাছের ক্ষুদ্র বীথিকাটিই অবশিষ্ট রয়েছে ।সম্প্রতি রাস্তা, ফুটপাথ এবং ড্রেন্ নির্মাণের জন্য এই গাছগুলিও কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে । গতকাল দুপুর নাগাদ একটি বড় ডাল কাটা হয়।

এই খবরটি জানতে পেরে কুচবিহারের বিভিন্ন সংগঠন এই বিষয়ে সরব হয়েছে এবং গাছ কাটবার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আজ ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন, কুচবিহার আর্কাইভ, সাইন্স ওয়ার্কিং সোসাইটি, কুচবিহার মাউন্টেনীয়ার্স ক্লাব, পিপলস্ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, অনুভূতি, কবওয়েব - হার্ডকোর কুইজ লাভার্স কুচবিহার, দোতরার ডাং প্রভৃতি সংগঠন-সহ বহু সাধারণ মানুষ গাছ কাটবার বিরুদ্ধে গাছগুলি পাদদেশে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন করছে।কুচবিহারের জেলা সমার্হতার কাছে সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পিটিশন সংগ্রহ করে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছে ।

কেন প্রতিবাদ তাদের প্রতিবাদ? আর কোচবিহার বাসীর কথায়:

 

১. কুচবিহার শহরের অবশিষ্ট বীথিকাটি অন্ততঃ শতবর্ষ প্রাচীন ;

২. উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে লাগানো এই গাছগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, সদ্য ঘোষিত 'হেরিটেজ শহর' কুচবিহারে এই গাছগুলি 'হেরিটেজ বৃক্ষ'-র তকমা পাওয়ার দাবি রাখে ;

৩. বিশ্বউষ্ণায়নের এই যুগে গাছগুলি প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের দিক থেকে এই বৃক্ষছেদন খুবই ক্ষতিকারক ;

৪. উদ্ভিদবিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এগুলি গুরুত্বপূর্ন রসদ, এই গাছগুলি উত্তরবঙ্গে 'তল্লী' ও দক্ষিণবঙ্গে 'খিরিশ' নামে পরিচিত এদের বিজ্ঞানসম্মত নাম Albezia saman, গোত্র : ফ্যাবাসি, গাছগুলির উপর বিভিন্ন ধরণের অর্কিড ও ফার্ণ-ও বর্তমান ;

৫. শহরাঞ্চলের কিছু জায়গায় ওই গাছগুলির উপর Asian openbills অথবা Asian openbill storks(Anastomus oscitans, গোত্র : Ciconiidae) তাঁদের বাসা নির্মাণ করে(যদিও এগুলির উপর এখনও তাঁদের বসতি/habitat নেই), সেকারণে জৈববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এই গাছগুলির ভূমিকা অপরিসীম ;

৬. গাছগুলির স্নিগ্ধ-ছায়া কুচবিহারের মানুষের, সর্বপরি পথিকের কাছে আশীর্বাদ-স্বরূপ, গাছগুলি আমাদের উত্তরবঙ্গবাসির গর্ব, আমাদের সকলের সম্পদ

কোচবিহারের বাসীর দাবি

 

১. সাধারণত রাস্তা বা ফুটপাথ নির্মাণের সময় গাছ বাঁচাবার জন্য রাস্তা বা ফুটপাথ ওই জায়গাগুলি থেকে একটু সরিয়ে নির্মাণ করা হয়, ভারতবর্ষের 'উদ্যান শহর' ব্যাঙ্গালোরে এরকম অজস্র উদাহরণ রয়েছে, মেদিনীপুরের খড়গ্পুর আই.আই.টি.-তেও এরকম উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় - আমাদের দাবি রাস্তা বা ফুটপাথ নির্মাণ হলে সেগুলি যথাক্রমে গাছ বাঁচিয়ে এবং ফুটপাথ পাশে সরিয়ে নিয়ে(পাশে জায়গা রয়েছে) করতে হবে ;

২. যদি রাস্তা আরোও চওড়া করতে হয় তবে গাছগুলির চারপাশে স্থায়ী ব্যারিকেড নির্মাণ করে রাস্তার শুধু ওইটুকু অংশ 'প্রটেক্টেড জোন' হিসেবে ঘোষণা করতে হবে ;

৩. ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লীর N.C.T.(National Capital Territory)-র সরকার দিল্লী ও N.C.R.(National Capital Region)-এর কিছু পুরোনো বৃক্ষ তারা "Natural Heritage" বা "Heritage Trees" হিসেবে ঘোষণা করবার প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং সেই অনুযায়ী মোট আঠারো(১৮)টি বৃক্ষ এখন পর্যন্ত হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে - এই ঐতিহাসিক বৃক্ষগুলিকেও "Natural Heritage" বা "Heritage Trees" হিসেবে ঘোষণা করতে হবে ;

৪. অনতিবিলম্বে কুচবিহারের অন্যান্য জায়গায় যে সমস্ত ঐতিহ্যপূর্ণ কিংবা বিরল প্রজাতির গাছ রয়েছে সেগুলির সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে ।

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, আজ সকাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে পোস্টকার্ড লিখে পাঠানো হচ্ছে প্রায় ৫০০ পোস্ট কার্ড।

ঋষিকল্প পাল, রাজা বৈদ্য ,সাগ্নিক চক্রবর্তী
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.