দেহ ত্যাগের দুদিন আগে স্বামীজী নিমন্ত্রণ করেছিলেন নিবেদিতাকে। কিন্তু তারপর?
নজরবন্দি ব্যুরোঃ দেহ ত্যাগের দুদিন আগে স্বামীজী নিমন্ত্রণ
করেছিলেন নিবেদিতাকে । আয়োজন খুব বেশী ছিল না । অতি সামান্য উপকরণ । বরফ দিয়ে
ঠান্ডা করা দুধ, আলু সেদ্ধ, কাঁঠাল বিচি
সেদ্ধ আর ভাত । উপকরণের অভাব বিবেকানন্দ আদরযত্নে পূরণ করে দিলেন । স্বামীজী নিজেই
পরিবেশন করছেন । মজার মজার কথাবার্তা স্বামীজী বলছেন নিবেদিতা বসে বসে শুনছেন সে
সব কথা আর খাচ্ছেন।খাওয়া শেষ হল। স্বামীজী নিজের হাতে জল ঢেলে দিলেন, পরে
নিজেই তোয়ালে দিয়ে হাত মুছিয়ে দিলেন । লজ্জা পেলেন নিবেদিতা।বললেন, স্বামীজী,
এসব তো শিষ্য-শিষ্যারাই করে।আপনি এসব করছেন কেন ? স্বামীজী একটু
হাসলেন। তারপর পরম স্নেহে ধীরে ধীরে উত্তর দিলেন, তুমিতো জান
যিশুও তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।উত্তর শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন নিবেদিতা ।
ফ্যাকাসে হয়ে গেল তার মুখ। এ কি কথা শুনছেন তিনি গুরুর মুখে ? যিশু
তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়ছিলেন কিন্তু সে তো তার মৃত্যুর আগের দিন। নিবেদিতা
বিদায় নিলেন।গুরু আশীর্বাদ করলেন তাঁকে। স্বামীজী ইঙ্গিতে আপনার মৃত্যুর
সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন নিবেদিতাকে, কিন্তু নিবেদিতা বুঝতে পারেননি । আসল
কথা কয়েকদিন স্বামীজীকে তো বেশ সুস্থই দেখাচ্ছিল ।
শুক্রবার ৪ জুলাই। সেদিন বেশ ভাল আছেন স্বামীজী।
সকালে ধ্যান করলেন দীর্ঘকাল ধরেই। দুপুরে শিষ্যদের সংস্কৃত পাঠ দিলেন। বিকেলে কয়েক
মাইল পায়ে হেঁটে ঘুরে এলেন। ফেরার পরে যখন সন্ধ্যারতির ঘন্টা বাজছে, তখন
নিজের ঘরে এসে ধ্যানে বসলেন। মুখ তাঁর দক্ষিণেশ্বরের দিকে। হাতে তাঁর জপের মালা।
একঘন্টা অতিক্রমণের পর তিনি মেঝেয় শুয়ে পড়লেন। আরও একঘন্টা পরে দুটি গভীর শ্বাস
বের হয়ে এল । সামান্য একটু কান্না শিশুর মতো। তারপর তারপর সব শেষ। ধ্যানের মাধ্যমে
আত্মা বের হয়ে গেছে দেহ ছেড়ে। দেহটা শুধু পড়ে রইল পরিত্যক্ত বস্ত্রের মতো।

No comments