Header Ads

১৩ই মার্চের মহামিছিল আর মুম্বাই বাসীর এক বাস্তব গল্প। #EXCLUSIVE

নজরবন্দি ব্যুরোঃ মুম্বাই শব্দটা শুনলেই আপনার কি মনে হয় বলুন তো? বলিউডের গ্ল্যামার।নাইট ক্লাবের হুল্লোড়। বিশাল বিশাল অট্টালিকা। জুহু বিচ। সোনা আর হীরের কারবার। শেয়ার মার্কেট। আকাশে উড়ছে কোটি কোটি টাকা।
শুধু ধরে ফেলার অপেক্ষা। সব মিলিয়ে একটা বেশ ব্যাপার আছে কিন্তু। এই মুম্বাই ঘামের গন্ধ চেনে না। এই মুম্বাই জানে না মাসের শেষ দিনগুলো চালাতে কতটা কষ্ট হয়।তবে আর একটা মুম্বাইও আছে। সেই বিখ্যাত লোকাল ট্রেন। সেই ভিড়। সেই মূল শহরকে ঘিরে থাকা মধ্যবিত্ত বা নিন্ম মধ্যবিত্ত এলাকা। এবং প্রচুর বস্তি। এই মানুষরা জানে পেটের জ্বালাটা কি। তবে এদের লড়াই সংগ্রামটা বরাবরই ওই অফিস, ছোটখাটো ব্যবসা, কিংবা অন্ধকার জগতের ভুলভুলাইয়াতেই সীমাবদ্ধ। রাজনীতি বলতে মুম্বাই বরাবর বোঝে শিবসেনা, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস। লালঝান্ডা? সেটা কি? মহারাষ্ট্রে হাজারে হাজারে কৃষক আত্মহত্যা করেছে। আঁচ আসেনি রাজধানীতে। তাই দূর থেকে আহা উহু করেই থেমে গেছে মুম্বাই। রবিবার ছুটির দিন হঠাৎ চমকে গেছে গোটা শহরটা। কেঁপে গেছে উঁচু উঁচু অট্টালিকাগুলো। ঘুম ভেঙেছে স্লোগানে। সে স্লোগান সমুদ্র গর্জনের মতো। ঘুম চোখে ৩০ তলার ব্যালকনি এসে দাঁড়াতেই চোখ কপালে? এ কি?

মুম্বাই শহরে ঢুকছে হাজার হাজার লালঝান্ডা। ঢুকেই চলেছে। মানুষের মিছিল এসেই যাচ্ছে। আসছে তো আসছেই। এরা কারা? আর পুঁজিবাদীদের শহর হঠাৎ লালঝান্ডার দখলে কি করে গেলো? তবে যে মুম্বাইয়ের মানুষ ফেসবুকে দেখেছে। টিভিতে দেখেছে। লালঝান্ডা মুছে গেছে? লেনিনকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে? লিফটে করে নীচে নেমে পায়ে পায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে মুম্বাই। মিছিলটা যাচ্ছে। একগাদা গরীব লোক। ছেড়া জামা। রঙ ওঠা প্যান্ট। ছেড়া চপ্পল। পুরোনো শাড়ির মিছিল। মুম্বাই চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছে এই তোমরা কারা? পরিষ্কার মারাঠীতে উত্তর এসেছে। ‘আমি লেনিন। আমরা লেনিন।’ যাকেই জিজ্ঞেস করা হয়েছে। একই উত্তর। চটি ছিড়ে গেছে। পা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। তবু হাঁটছে লেনিন। স্লোগান তুলছে। রাশিয়ান ভাষায় নয়। বিশুদ্ধ মারাঠিতে। কি বলছে এই হাজার হাজার লেনিন। বক্তব্য খুব পরিস্কার। ‘আর নয়। ঋণের দায়ে আত্মহত্যা আর নয়। এবার অধিকার বুঝে নিতে হবে।’ সবাই একই কথা বলছে। কাঁধের লাল ঝান্ডা শক্ত করে ধরা। মুম্বাইয়ের মধ্যবিত্ত আর গরীব মানুষ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছে। হাতে জলের বোতল। শুকনো খাবার। তাঁরা তুলে দিচ্ছে অচেনা মানুষগুলোকে। বুঝিয়ে দিচ্ছে পাশে আছি। গুরুদ্বারা থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। হাজারো কৃষককে। ধর্ম হেরে যাচ্ছে পেটের জ্বালার কাছে।


মিছিল এগিয়ে চলছে। গ্রামের খেটে খাওয়া হাত গুলোতে আরও হাত এসে মিলছে। জোট হচ্ছে। গরীবের জোট। পেটের জ্বালা সবাইকে মিলিয়ে দিচ্ছে। কাল সকালে এই মিছিল এগিয়ে যাবে বিধানসভার দিকে। পুলিশ বাঁধা দেবে। বাঁধবে লড়াই। লেনিনরা বলছে, ‘না হয় আত্মহত্যা করতাম। এখন পুলিশের গুলি খাবো। আমরা এগোবোই।’ এই সময়ই চারিদিকে ফোনাফুনি।‘কি হলো লালঝান্ডা তো শেষ? এরা কারা?’ ‘তুমি যে বললে কেরালা ছাড়া ওরা কোথাও নেই। মহারাষ্ট্রে এরা কারা?’ ‘ধর্ম দিয়ে আর ভাগ করা যাচ্ছে না এঁদের। শিবসেনাকে দিয়ে মিছিলের দখল নিতে গেছিলাম। পারিনি। তাড়িয়ে দিয়েছে।’ ‘ওরা ক্ষিদে নিয়ে হাঁটছে। আমাদের বিপদ বাড়ছে।’
হাসছেন। লেনিন হাসছেন। ত্রিপুরার ভেঙে যাওয়া মূর্তিটার মুখটাও হাসি হাসি। লেনিন বলছেন, ‘ভেঙে ফেললেই কি ভেঙে ফেলা যায়?’

(লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত, লেখকের নাম পাওয়া যায়নি)
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.