Header Ads

মুকুল এলেও ফুটল না পদ্ম! তৃণমূলকে ভাঙতে গিয়ে অস্তিত্ব সংকটে বিজেপিই!

বাবুল সরকার, কামাখ্যাগুড়ি: তৃণমূলের এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকমাস হল। কথা ছিল, মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙন ধরাবেন। শক্তিশালী হবে বিজেপির দলীয় সংগঠন। তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙতে গিয়ে এখন উল্টে বিপাকে আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষ সহ অন্য রাজ্য নেতৃত্বরা উত্তরবঙ্গ সফরের পরও দলের অন্দরে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিল মুকুল রায়কে দিয়ে তৃণমূলকে ভাঙা অনেক সহজ হবে। কিন্তু বাস্তবে তা খুব একটা সম্ভব হয়নি। বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে এমন বিদ্রোহ দেখা দেবে, তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপির অবস্থা এখন তাই।
দলের পুরনো নেতাদের একাংশের অভিযোগ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আলিপুরদুয়ার জেলায় অস্তিত্ব হারাতে চলেছে বিজেপি-র সংগঠন। বিজেপির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়ে জেলায় পদত্যাগ অব্যাহত রয়েছে গেরুয়া শিবিরের নীচু তলার নেতা কর্মীদের। খোদ জেলা সহ সভাপতির বিদ্রোহের শরিক হয়ে অনেকেই বিজেপি ছাড়ছেন। আর তাতেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন বিজেপি জেলা সভাপতি। জেলায় বিজেপিতে ভাঙনের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের অগাস্টে। সে সময় দলের আলিপুরদুয়ার জেলা সহ-সভাপতি হেমন্তকুমার রায় বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, দলের জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা তলে তলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার হয়ে কাজ করছেন। দিল্লিতে গিয়ে গোর্খাল্যান্ডের হয়ে সওয়াল করছেন। যার প্রভাব পড়ছে দলের সংগঠনে। বিজেপি যে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে, তা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত অভিযোগ তুলে হেমন্তকুমার রায় বিজেপি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। এরপর তাঁর পথ ধরে বিজেপির একাধিক নেতা কর্মী ইস্তফা দিতে শুরু করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপির ১০ নম্বর মণ্ডল কমিটির ১৯ জন বুথ সভাপতি। এছাড়াও ওই মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে সম্পাদক, সহ সভাপতি ও তিন শতাধিক সদস্যও ইস্তফা দেন বলে খবর। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলে পা বাড়িয়েছেন।

ডুয়ার্সের আদিবাসী নেতা পবন লাকড়াও তার পুরোনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে তিনি বিজেপি ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেস যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে অনুগামী কর্মীরাও গিয়েছেন তৃণমূলে। আর সেই ধারা বজায় রয়েছে নতুন বছরেও। এমনকী মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ-রা উত্তরবঙ্গ সফরে এসেও এই ভাঙন আটকাতে পারেননি। আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ১২ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে গত ৩১ ডিসেম্বর বিজেপি ছেড়েছেন। তারপর ভাঙন ধরেছে বিজেপি জেলা সভাপতির অনুগামীদের মধ্যেও। ৬ জানুয়ারি ১০ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি অনুপ রায়, সাধারণ সম্পাদক বিক্রম কার্জি কর্মীদের নিয়ে বিজেপি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। জেলা বিজেপিতেই এমন বিদ্রোহ নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়ে পুরনো এইসব বিজেপি নেতাদের দাবি, বর্তমান রাজ্য সভাপতির মোর্চা-ভজনা চলতে থাকলেও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে একসময় বিজেপির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে জেলায়। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ।
সম্প্রতি কালচিনিতে প্রায় ৫০০ জন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। কালচিনির সাবিত্রী ধর্মশালায় এই দলবদলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিজেপি-র যুব মোর্চার কালচিনি ব্লক সভাপতি শম্ভু নিরোলা, কার্যকরী সভাপতি দ্বীপেশ সূত্রধর সহ যুবমোর্চার গোটা কমিটি তৃণমূলে সামিল হয়েছে। যদিও এবিষয়ে বিজেপি-র আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা জানান, যুবমোর্চার কালচিনি ব্লক কমিটি অনেকদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় ছিল। যুবমোর্চার সভাপতি সহ যারা আজ শাসকদলে যোগদান করেছেন, তাঁদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছিল। তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হত। সেই সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় তাঁরা দল বদল করেছেন। এতে আমাদের দলে কোনও ক্ষতি হবে না। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।

আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মোহন শর্মা জানান, "বিজেপি-কে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে সমূলে উৎপাটন করব। শুধু কালচিনি ব্লক নয়, গোটা জেলার সব ব্লকে বিজেপি থেকে দলে দলে মানুষ আমাদের দলে আসার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। সময়মতো তাঁদের দলে নিচ্ছি"। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির জেলাস্তরের একজন প্রাক্তন নেতা জানান, দলের বর্তমান জেলা সভাপতির অযোগ্যতার জন্যই জেলা সংগঠনের এই অবস্থা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। রাজ্য নেতৃত্বের উচিত এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.