Header Ads

নজরবন্দির বিশেষ প্রতিবেদন "হারিয়ে যাওয়া কবি গান" ।। অবশ্যই পড়ুন Exclusive


নজরবন্দি ব্যুরোঃ গ্রাম বাংলায় প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন লোক সঙ্গীত প্রচলিত আছে যেমন বাউল, বোলান, কবিগান ইত্যাদি। কবি গানের প্রচলন ছিল অষ্টাদশ শতক বা তার আগে থেকে বলে মনে করা হয়। সময়ের সাথে সাথে অনেক কবিয়াল বাংলার লোক সংগীত এর ভান্ডার পূর্ণ করে দিয়েছেন।

কবিগান সাধারণত দুই দলের মধ্যে হয়। দুই কবিয়াল ছন্দের মাধ্যমে প্রশ্ন উত্তরের খেলা করেন। কবিয়ালরা বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হন। সামাজিক ধর্মীয় বিষয়গুলি তাদের থাকে নখদর্পনে। একজন কবিয়াল তাঁর প্রতিপক্ষ কবিয়াল পাল্লাদার বলে সম্বোধন করেন। প্রথমে কবিয়াল গুরুবন্দনা দিয়ে তাঁর কবিগান শুরু করেন। তারপর কোনো একটি বিষয় তুলে প্রশ্ন বান ছুঁড়ে দেন তাঁর পাল্লাদার এর দিকে। প্রতিপক্ষ কবিয়াল ছন্দের মাধ্যমে উত্তর দিতে থাকেন। এই ভাবে কাব্যিক রসে শ্রোতাদের মনরঞ্জন করে থাকেন।

বীরভূম জেলায় কবিগান এর প্রচলন ছিল শুরু থেকেই। লোককবি লম্বোদর চক্রবর্তী, গঞ্জিলা গুঁই এনারা ছিলেন বিখ্যাত কবিয়াল বীরভূমের।
কলকাতা শহরে ও ছিল কবিগানের রমরমা। হারু ঠাকুর, ভোলা মইরা, নিতাই বৈরাগী ছিলেন গুণী কবিয়াল। কবিগান যে শুধু বাঙালির তাই নয়। পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত এন্টনি ফিরিঙ্গি কবিয়াল এর নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলার কবিগান এর ভান্ডার পূরণ করার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
এন্টনি ফিরিঙ্গি – ‘আমি ভজন সাধন জানি নে মা/ নিজে ত ফিরিঙ্গি। যদি দয়া করে কৃপা কর/ হে শিবে মাতঙ্গী’।

“ড. সুশীল কুমার দের মতে, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে, এমনকি সপ্তদশ শতাব্দীতেও কবিগানের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু কবিওয়ালদের প্রকৃত বিকাশকাল হল ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যবর্তী সময়। এই সময় বাংলা কাব্যের ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক উপাদানগুলি ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছিল। বাংলা কাব্যও বৈষ্ণব কবিতার ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মুদ্রণযন্ত্রের আবির্ভাব এই বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টাকে সার্থক করে তোলে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে পরবর্তী অর্ধশতাব্দীকাল নব্য কবিগান এবং পাঁচালি গান কলকাতা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে সাহিত্যের অন্যান্য ধারাগুলির অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।পরবর্তীকালে কলকাতায় কবিগানের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেও গ্রামবাংলায় এর জনপ্রিয়তা কিছুমাত্র কমেনি।”
“ময়মনসিংহের মুগ ভালো, খুলনার ভালো কই।
ঢাকার ভালো পাতাক্ষীর, বাঁকুড়ার ভালো দই।।
কৃষ্ণনগরের ময়রা ভালো, মালদহের ভালো আম।
উলোর ভালো বাঁদর পুরুষ, মুর্শিদাবাদের জাম।।
রংপুরের শ্বশুর ভালো, রাজশাহীর জামাই।
নোয়াখালির নৌকা ভালো, চট্টগ্রামের ধাই।।
দিনাজপুরের কায়েত ভালো, হাবড়ার ভালো শুঁড়ি।
পাবনা জেলার বৈষ্ণব ভালো, ফরিদপুরের মুড়ি।।
বর্ধমানের চাষী ভালো, চব্বিশ পরগণার গোপ।
গুপ্তিপাড়ার মেয়ে ভালো, শীঘ্র-বংশলোপ।।
হুগলির ভালো কোটাল লেঠেল, বীরভূমের ভালো বোল।
ঢাকের বাদ্য থামলেই ভালো, হরি হরি বোল।।”  −ভোলা ময়রা।

“সুশীল কুমার দে, কবিওয়ালদের প্রশংসাই করেছেন। তাঁর মতে, এঁরা ছিলেন সমাজের নিচু তলার মানুষ। সমাজের নিচু তলার মানুষদের মধ্যেই ছিল এঁদের জন্ম ও বিচরণ। তাই এই সমাজের চিন্তাভাবনা অনুভূতিগুলি তাঁরা ভালই বুঝতেন। আধুনিক সাহিত্যকার সমাজের যে অংশকে অশিক্ষিত মনে করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন, সেই অংশে এঁদের জনপ্রিয়তা ছিল অবিসংবাদী।”
বর্তমানে কবিগান একটা হারিয়ে যাওয়া লোক সংগীত এর পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। গ্রাম বাংলা বা শহরে কবিগান তেমন ভাবে আর শোনা যাচ্ছে না। বর্তমান এর তরুণ প্রজন্ম কবিগান এর সাথে পরিচিত হতে পারছে না বা পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছে না। বাউল এর মতো কবিগানেরও বহুল প্রচলন হওয়া উচিত। এই কবিগান কে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কে এগিয়ে আস্তে হবে।

সৌজন্যে:রাঢ়বাংলা, বীরভূম
Loading...

No comments

Theme images by lishenjun. Powered by Blogger.