Header Ads

জনসংযোগে কৃষিকাজে কাজে হাত লাগাতেন বাম নেতারা৷কোথায় তাঁরা? প্রশ্ন ৮০পার করা বৃদ্ধের

বিশেষ প্রতিবেদনঃ অনেকে বলছেন কেন তৃণমূলকে হঠাৎ করে জনসংযোগের উপর জোর দিতে হচ্ছে?যে দল পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল৷ তীব্র বাম বিরোধীতা কে পুঁজি করে যে দলটির উত্থান মত উল্কাবেগে, মাত্র ৮ বছরে কেন তাদের নেতা,কর্মীদের আত্মবিশ্বাস এত ভঙ্গুর? কেন তারা নিজেরাও নিশ্চিত নয় আদৌ আর ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব কিনা! সত্যি কথা বলতে কি প্রবল বাম বিরোধীতা,সঙ্গে অনুঘটকের মত সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলন হঠাৎ করেই তৃণমূলের পালে জোয়ার এনেছিল৷সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বামেদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট৷সবমিলিয়ে ২০১১এর পালাবদল,৩৪বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে পরিবর্তনের জমানার পথ চলা৷কিন্তু কেন মাত্র ৮ বছরে মুখ থুবড়ে পড়ছে পরিবর্তন?কেন মানুষ দ্রুত মুখ ফেরাচ্ছেন তৃণমূলের থেকে?আসলে আজ যারা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি বা নেতা,তারা কিন্তু মানুষের একেবারে অজানা,অচেনা নন৷
সত্যি কথা বলতে কি তাদের সবার সত্যিই যদি বিপুল জনপ্রিয়তা থাকত,জনভিত্তি থাকত,তবে বামফ্রন্ট সরকার হয়ত ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকত না!কিন্তু অতীতের কংগ্রেসি,ক্ষমতার মধুভান্ডের খোঁজে বর্তমানের তৃণমূল নেতাদের উপর মানুষ সেই ভরসা কখনও করতে পারেনি,বা ভাবতে পারেন নি তারা বামেদের বিকল্প হবেন৷অবশ্য তৃণমূল সুপ্রিমো নিজের ক্যারিশমায়,সঙ্গে তুমুল বাম বিরোধী আন্দোলন করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন৷মানুষকে তৃণমূল ভরসা জুগিয়েছিল পরিবর্তন হলে রাজ্যের ও রাজ্যের মানুষের সার্বিক অবস্থা আমুল বদলে যাবে,সর্বত্রই রাজ্যের উন্নতি,রাজ্যের মানুষের সামগ্রিক উন্নতি চোখে পড়বে৷মানুষ তাদের কথায় প্রভাবিত হয়েছিলেন,বিশ্বাস করেছিলেন৷২০১১-এর পর রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার পথ চলা শুরু করল৷মানুষও লক্ষ করলেন কিছু আজব রাজনৈতিক সংস্কৃতি,যা হিন্দিবলয়ে বহুল প্রচলিত হলেও বাংলায় দীর্ঘ ৩৪ বছরে বামেরা কখনও প্রশ্রয় দেয়নি৷শুরু হল সেই বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের অনৈতিক ভাবে ভাঙানো,রাতারাতি কংগ্রেসের বিরাট অংশ হঠাৎ করে উন্নয়নে সামিল হলেন৷অল্প দু-চারজন বাম নেতা,কর্মী ভাসতে লাগলেন উন্নয়নের স্রোতে৷ ২০১৩ বাম,কংগ্রেসের জেতা বহু পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল অনৈতিক ভাবে বোর্ড গঠন করল৷নিন্দুক বলেন পুলিশ দিয়ে মিথ্যে কেসের ভয় দেখিয়ে তাদের তৃণমূলে যোগদান করানো হয়েছিল৷সঙ্গে চলেছে নিয়ম করে বাংলাকে বিরোধী শুন্য করার প্রয়াস৷২০১৬ বাম-কংগ্রেস জোট তৃণমূলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে৷দ্বিতীয় বারের জন্য রাজ্যের শাসন ক্ষমতা দখল করে তৃণমূলের দল ভাঙানো ও দখলদারির রাজনীতি যেন আর গতি প্রাপ্ত হয়,কার্যত শিল্পের রূপ পায়৷২০১৮-পঞ্চায়েত নির্বাচনের নামে প্রহসন দেখলেন রাজ্যের মানুষ৷শাসক আশ্রিত দুষ্কৃতিরা বিরোধীদের নমিনেশান ফাইল করতে দিল না বহু জায়গায়৷ঝরল রক্ত৷৩৪শতাংশ মানুষ রাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবার পঞ্চায়েত ভোট দিতে পারলেন না৷যারা পারলেন তারাও কার্যত শাসকের মর্জিমত ভোট দিতে বাধ্য হলেন৷এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও অনেক অভিযোগ৷সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া ডিএ নিয়ে প্রবল অসন্তোষ,প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রায় শূন্য,তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি থেকে নেতা কর্মীদের অনেকের সম্পত্তি বৃদ্ধির গতি হার মানালো রকেটের গতিকে৷আরও আছে, সরকারি প্রকল্প গুলির সুবিধা পেতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের নজরানা,মিডিয়ার ভাষায় কাটমানি দেওয়া প্রায় নিয়মে পরিণত হওয়া৷অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷মানুষ বিকল্প খুঁজছিলেন,অনেকে পরিত্রান চাইছিলেন৷সেই সুযোগটা মানুষ পেলেন ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে৷তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত যাবতীয় ক্ষোভ মানুষ যেন উগরে দিলেন ইভিএমে৷কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় মানুষ ভোট দিলেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে৷যার নিট ফল বিজেপি ১৮,তৃণমূল ২২,কংগ্রেস ২ ৷অর্থাৎ বিজেপি আর তৃণমূলের মাঝে ফারাকটা প্রায় সুতোর মত৷
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অনুধাবন করেছেন রাজ্যের মানুষের সমর্থন তারা হারাচ্ছেন দ্রুত গতিতে৷হয়ত সেইজন্য নতুন কিছু করার চেষ্টা তারা শুরু করেছেন৷জোর দেওয়া হচ্ছে জনসংযোগের উপর৷সংবাদ মাধ্যমের খবর দলের জনপ্রতিনিধিরা গ্রামে গ্রামে ঘুরবেন কথা বলবেন দলের কর্মী থেকে যেকোনও সাধারণ মানুষের সঙ্গে। এরপরেই আছে আরও ইন্টারেষ্টিং পর্ব,বুথ কর্মীর বাড়িতে বসে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করবেন। রাত ও কাটাতে হবে সেখানেই।এরপর অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করে তবেই এলাকা ছাড়ার সুযোগ৷ অবশ্য রাজ্যে এই ইতিহাস,ঐতিহ্য অনেক পুরনো৷বাম আন্দোলনকে যারা পথ দেখিয়েছিলেন,যাদের কথা উঠলে মানুষ আজও শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন সেই কৃষক সভা বা ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা দিব্যি চলে যেতেন গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত এলাকার কোনও এক সমর্থকের বাড়িতে৷বাড়ির মাটির দাওয়ায় বসে গৃহকর্তার জোগাড় করা খাবার পরম তৃপ্তিতে খেয়ে পার্টির জন্য জনসংযোগ করে দিব্যি গরিব পার্টি সমর্থকের মাটির দাওয়ায় রাত কাটিয়ে আবার চলে যেতেন গ্রাম বাংলার অচেনা গাঁয়ের অন্য কোনও পার্টি সমর্থকের বাড়িতে৷পার্টির প্রচার,জনসংযোগ অবশ্যই তাদের আসল উদ্দেশ্য হলেও,তাদের চালচলন,হাবভাবে লোক দেখানো বিষয় ছিল না,আরাম-আয়েস ছিল না৷আবেগ,স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল অনেক,অনেক বেশি৷৮০টি বসন্ত পার করা গ্রাম বাংলার এক বাম সমর্থক এই প্রসঙ্গে স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে বললেন 'বাবা তখন ওসব ফোন-টোন ছিল না৷বর্ষার গ্রাম মানে জুতো হাতে করে কাদা পায়ে এক-দু কিমি হেঁটে গ্রামের বসতি অঞ্চলে আসা৷আমার বাড়িতে এক কৃষক সভার বড় নেতা বেশ কয়েকবার এসেছেন,আমাদের যা জুটেছে খেয়েছেন৷মাটির বাড়ির দাওয়ায় রাত কাটিয়েছেন৷এমন কি আমার সাথে দিব্যি ধান রোয়ার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন৷এমন নেতা আছে নাকি এখন'?তাঁর ছোঁড়া প্রশ্মের উত্তর সত্যিই ছিলনা আমার কাছে৷ জনপ্রতিনিধিদেরও নিয়ে নাকি সেই একই পথে হাঁটাতে চাইছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব৷রাজ্যের অনেক মানুষ এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন৷অনেকে বলেছেন বিলম্বিত বোধোদয় তৃণমূলের৷অনেকে আবার বলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন না ড্যামেজ কন্ট্রোলে ঠিক কি তাদের করনীয়!
এ বার অবশ্য সেই চেনা সরণির পথে তৃণমল৷তবে অনেকের কটাক্ষ আট বছর রাজত্ব করার পর বাংলায় আবার নতুন করে জনসংযোগ শুরু করতে হচ্ছে কেন তৃণমূল কে৷সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের জনসংযোগের অভিনব পন্থাকে ইতিমধ্যে কটাক্ষ করা শুরু করেছেন বাম থেকে বিজেপি সমর্থকরা৷তাদের বক্তব্য লোকসভায় দলের ভরাডুবিতে যতই তৃণমূল জনসংযোগের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিক আসলে দলটি,দলের নেতা,কর্মীরা মানুষের কাছে টেষ্টেড৷মানুষ তাদের কাছে আর নতুন কিছু প্রত্যাশা করেন না৷কারন তারা ঠিক কি করতে পারেন, সেই বিষয়ে প্রান্তিক এলাকার মানুষও আজ সম্যক ওয়াকিবহাল৷ তারা সত্যিই তৃণমূলের প্রতি ব্রীতশ্রদ্ধ৷সত্যি কথা বলতে কি তারা তৃণমূলের শাসন থেকে পরিত্রানের পথ খুঁজছেন৷সেইজন্যই বিকল্প হয়ে উঠেছে বিজেপি,লোকসভার ফল সেটা প্রমান করে, জোর গলায় দাবি করছেন গেরুয়া শিবিরের সমর্থকরা৷উল্টোদিকে বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের দাবি তৃণমূলের বিকল্প মানুষ খুঁজছেন এটা স্পষ্ট ১৯-এর লোকসভার ফলাফলে৷তাদের বক্তব্য বিজেপির ১৮ সিট জয় আসলে বিজেপির রাজনীতিতে প্রভাবিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষের ভোটদান নয়,বরং তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে আপাতত বেছে নেওয়া৷বাম-কংগ্রেসের নেতা থেকে কর্মী,সমর্থকরা বারবার বলছেন বিজেপির রাজনীতির মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে রাজ্যের শাসক দল৷তৃণমূল আমলেই রাজ্যে হু হু করে বেড়েছে বিজেপি৷পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেরুকরণের রাজনীতি৷স্বভাবত বাম গনতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ফের আবার রাজ্য রাজনীতিতে অনেক মানুষের কাছে তৃণমূলের তুলনায় বিজেপির মোকাবিলায় অধিক বিশ্বস্ত বলে মনে হচ্ছে৷বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের বক্তব্যের সুর একই সুরে বাঁধা, হারাতে হবে বিজেপিকে,হারাতে হবে তৃণমূলকে৷রাজ্যের সাধারন মানুষও তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়ও বুঝতে পারছেন তৃণমূল নয়, বিজেপির মোকাবিলায় বিকল্প হওয়ার ক্ষমতা ধরে বাম গনতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি৷
Loading...

কোন মন্তব্য নেই

lishenjun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.